দেশজুড়ে

লিচুতে ভালো দাম পাওয়ার আশা চাষিদের

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৮ মে ২০২৩ , ১:৩২ অপরাহ্ণ

টসটসে লাল লিচু। দেখলেই জিভেয় জল আসে। হাতে নিয়ে খোসা ছাড়াতেই ফিনকি দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। মুখে দিলে তো কথাই নেই। অমৃত স্বাদে চোখ মুখ বন্ধ হবে নিশ্চিত। সুস্বাদু লিচুর প্রতি প্রেম নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে স্বাদে ও রসে এগিয়ে রাখতে হবে দিনাজপুরের লিচুকে। বিশেষ করে বেদানা লিচু। ইতোমধ্যে সারাদেশে যার নাম ডাক ছড়িয়েছে। মৌসুম এলেই এই লিচুর জন্য অপেক্ষায় থাকেন সবাই।

‘চাল-লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর।’ জেলা ব্র্যান্ডিং এর শ্লোগান এটি। লিচুর রাজ্য হিসেবে সুনামও ছড়িয়েছে দিনাজপুরের। ১৩টি উপজেলাতেই কম বেশি লিচুর আবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর, বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর, বটহাট এবং চিরিরবন্দর-খানসামা উপজেলায়। মূলত লিচু চাষের জন্য উপযোগী এ অঞ্চলে লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না থ্রী ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঠালি ৫৬ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচু গাছ রয়েছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন।

dhakapost

সাধারণত বাংলা জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে দিনাজপুরের লিচু পাকতে শুরু করে। চাষিরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর দেখা মিলবে জৈষ্ঠ্যের শেষ ভাগে। দিনাজপুরে চাষ হয় মাদ্রাজী, বেদানা, হাড়িয়া বেদানা, বোম্বাই, চায়না থ্রী, কাঁঠালি লিচু। তবে এসবের মধ্যে বাজারে প্রথম দেখা মিলবে মাদ্রাজী লিচুর।

লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায় গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে সবুজ রঙের লিচু। তবে কিছু কিছু গাছে লালচে রং ধারন করেছে লিচু। ফলের ভারে কিছুটা নুয়ে পড়ছে গাছের ডালগুলো।

সদর উপজেলার রবিপুর এলাকার লিচু চাষি শিশির শাহ  বলেন, ৩০ বিঘা জমিতে লিচু বাগান আমার। বেদানা ও মাদ্রাজীর ফলন কম। কৃত্রিম সেচ দিয়ে যাচ্ছি। এবার মুকুল অনেক পরে আসছে। অধিকাংশ গাছে পাতা ও মুকুল বের হয়েছে। গতবার ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছি। তবে এবার অন্তত ৪০ শতাংশ ফলন কমেছে। তবে বাজারে ভালো দাম পাবো বলে আশা করছি।

চিরিরবন্দর আমতলি বাজার এলাকার লিচু চাষি মোকছেদুল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের মাদ্রাজী লিচুর ফলন কম হয়েছে ও আকারে ছোট হয়েছে। ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছি আমাদের কৃষি বিভাগকে। তবে বোম্বাই লিচুর ফলন এবার সব গাছে মোটামুটি ভালো। আশা করছি বাজারে লিচুর দাম ভালো পাবো। আগমী দুই সপ্তাহের মধ্যে দিনাজপুরের মাদ্রাজী লিচু বাজারে পাওয়া যাবে।

dhakapost

লিচু চাষি রহিম উদ্দিন বলেন, আমি এবার মোট চারশত গাছ বর্গা নিয়েছি। গতবছরের তুলনায় এবার ফলন কম। যে ফল আসছে তাতে এক হাজার লিচুর দাম ৩ হাজার টাকা হয় তাহলে লাভবান হবে। আশা করছি বাজারে এবার লিচুর দাম ভালো পাওয়া যাবে।

খানসামা উপজেলার শম্ভুগাঁও গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, শীত কম হওয়ায় মুকুল কম এসেছে। তারপর এবারের তীব্র দাবদাহ। ফলে লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা থাকবে বেশি। তাছাড়া এবার পরিচর্যার কাজেও খরচ বেশি হয়েছে। তবে লিচুর দাম পাওয়া নিয়ে আশাবাদি চাষিরা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা গাছ ও ফলের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। গতবার দিনাজপুরে লিচুর ফলন ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। সাধারণত একবার বেশি ফলন হলে পরেরবার ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে ফল পুষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর লিচুর মৌসুমে লিচু বিক্রি, পরিবহন, বাঁশের খাঁচা তৈরি ও শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় দিনাজপুরে।

আরও খবর: