দেশজুড়ে

নারায়নপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডে অনিয়মের অভিযোগ

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

শরীয়তপুর জেলা ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ডিলারের বিরুদ্ধে। প্রকৃত কার্ডধারী উপকারভোগীকে চাল না দিয়ে একই নামের অন্য ব্যক্তির কাছে চাল বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য একটি কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এরই নাম ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’। এই কর্মসূচির স্লোগান হলো— ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ।’

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গেল বছর ২৬ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে ১২ জনের রেসন কার্ড নবায়ন করে দিবে বলে ২০০ টাকা ও কার্ড নিয়ে নেন ডিলার স্বপন বেপারী। পরে ঐ কার্ডধারীদের কার্ড নবায়ন করে দেননি ও গেলো দুই মাসে চাল কিনতে গেলে ডিলার সবাইকে বলে আপনাদের কার্ড বাতিল করা হবে। আপনাদের আর চাল দেয়া যাবে না। চেয়ারম্যান সাহেব আপনাদের নাম কেটে অন্য মানুষকে দিবে বলেছে। তাই তাদেরকে চাল দেয়নি গত দুইমাস। এই ইউনিয়নে ২৮৫ জন উপকারভোগীকে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র কার্ড রয়েছে। তবে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র চালের কার্ড ছাড়া কোনভাবেই চাল দেয়া সম্ভব নয়। তবে গত ২ মাস ডিলার ১২ জনের ব্যক্তির কার্ডের চাল কি করলো?

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মাতাব্বর তার পছন্দের লোক খুজে খুজে গরিব মানুষের ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড বাতিল করে স্বাবলম্বী ও সচ্ছল মানুষকে চালের কার্ড করে দিচ্ছে। আর যাদের কার্ড বাদ দিচ্ছে তারা যদি গরিব হয় তাহলে তাদের কার্ড বাতিল করবে কেন। জানা যায়,এদের মধ্য অনেকে বিধবা,অনেকে অসহায় দারিদ্র রয়েছে। তাদের ভরশা প্রধানমন্ত্রীর এই সাহায্য কম দামে চাল খেয়ে তারা কোন রকম বেচে ছিলো। এখন তাদের কি হবে।

ভুক্তভোগী কার্ডধারী বিউটি আক্তার বলেন,আমাকে ৪ বছর আগে সরকার ১০ টাকা দরে কেজি চালের কার্ড করে দিয়েছে। ৫-৬ মাস পর্যন্ত আমি চাল পাইছি। তবে তার পরে আমাগো বাবলু মেম্বার আমার রেসন কার্ডটি নিয়ে নেয়। গত ৩ বছর হয় আমাদে কোন চাল দেয় না ডিলার।আমাকে মেম্বার বলে আপনারা চাল পাবেন না। পরে বলে আপনাদের কার্ড চেয়ারম্যান বাদ দিয়ে দিছে। তবে আমি শুনেছি আমার কার্ডের চাল ৯ নং ওয়ার্ডের ঠাকুরদা কান্দি গ্রামে একজন খায়। তবে ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার সবুজ তার ওয়ার্ডে কে ব কাহারা চাল পায় তা সে জানে না।

সাবেক ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাবলু মেম্বার বলেন, হে আমি বিউটি আক্তারের দালের কার্ড নিয়েছিলাম।তাদের চাল দিয়েছি ৪-৫ মাস। তবে আমি এখন মেম্বার পদে নেই। তাই এবিষয় আমার বলার কিছু নেই।

কার্ডধারী আলো বেগমের স্বামী শহীদ বেপারী বলেন, আমার কাছ থেকে ডিলার স্বপন বেপারী কার্ড নেয় নবায়ন করার জন্য ও ২০০ টাকা নেয়। পরে কিছুদিন পরে টাকাটা ভিরত দিয়ে দেয়। পরে বলে ফুফা আপনাদের কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। তাই আপনারা চাউল পাবেন না। আপনাগো কার্ডের চাউল এখন ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জানেআলমের ফুফু আলো বেগমের নামে চলে গেছে। এখন সে চাল পাবে।

কার্ডধারী জোসনা বলেন,আমার কার্ড আগে নিয়ে গেছে নবায়ন করা কথা বলে ডিলার স্বপন বেপারী, সাথে ২০০ টাকা নিয়েছে। পরে চাল আনতে গেলে বলে আমরা আর চাল পাব না। আমাদের কার্ড বাতিল। আর ২০০ টাকাও ফেরত দেয়নি স্বপন।

‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র নারায়নপুর ইউনিয়নের ডিলার স্বপন বেপারী বলেন, আমি কার্ড নিয়েছিলাম নবায়ন করার জন্যই। পরে নতুন চেয়ারম্যান সাহেবের দেয়া ১৯ জনের নামের লিস্ট অনুযায়ী চাল দেই। তবে ঐ ১২ জনের অনলাইনে নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে এই মাসে। আমি ১২ জনের থেকে ২০০ টাকা নিয়েছিলাম আবার তা ভিরত দিয়ে দিয়েছি।

এবিষয় নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মাতাব্বর বলেন, আমরা মেম্বারদের নিয়ে এলাকায় যাচাইবাচাই করে কিছু কিছু নাম পরিবর্তন করে অনলাইন করছি। তারমধ্য গরিবের কারোটা বাদ দেয়া হয়নি মনে হয়। তবে মেম্বাররা তদন্ত করে নাম দিয়েছিলো।এই সেপ্টেম্বর মাসে অনলাইনের নাম পরিবর্তনের কাজ চলছে। এর আগে পুরানো কার্ডধারীদের চাল দেয়ার কাথা। আপনি আমার অফিসে আইসেন সরাসরি কথা বলবো।

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) মাহামুদুল হাসান বলেন, এবছর আমরা ২ মাস চাউল দিতে পেরেছি। তবে আমি আপনার থেকে শুনলাম নারায়নপুরে ১২ জন কার্ডধারী চাউল পায়নি। তবে অনলাইনে নতুন করে পুরাতন নাম কারেকশন হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসে। এর আগে যাদি কারো অনলাইনে নাম থাকা সর্তেও তাদেরকে চাল না দেয়, তাহলে ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার কাছে নারায়নপুর থেকে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র কার্ডধারীদের ১২ জনের নামের’ ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের লিখিত একটি অভিযোগ এসেছে। কার্ডে কারো নাম অনলাইনে থাকা পর্যন্ত সেই ব্যক্তি চাল ক্রয় করতে পারবে। অন্য কারো ক্রয় করার সুযোগ নেই। তাই বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর চেয়ারম্যান গরিব কারো কার্ড বাতিল করে থাকলে সেইটিও আমরা খতিয়ে দেখবো।

আরও খবর: