জাগোকন্ঠ ১৪ আগস্ট ২০২২ , ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ
অতিমারি করোনার চতুর্থ দফায় প্রভাব নিয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে তা অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন গ্রহণে শুরুর দিকে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ কমেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করলেও এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ নেয়নি। সেই সঙ্গে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি।
বিভাগের ৬ জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় যৌথভাবে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং নগর ভবন কর্তৃপক্ষ। ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, দিন দিন ভ্যাকসিন গ্রহণের আগ্রহ কমছে বরিশালের মানুষের। সবচেয়ে বেশি অনাগ্রহ বুস্টার ডোজ গ্রহণে। তারা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীদের অর্ধেক মানুষও বুস্টার ডোজ নেয়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় বলছে, সিটি করোপরেশন এলাকা ও বিভাগের ছয় জেলায় ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ লাখ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৬৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮২ জন। প্রথম ডোজের চেয়ে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৭৪০ জন কম গ্রহণ করেছে দ্বিতীয় ডোজ। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪২ জন।
স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে শুরু হয় করোনার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ কার্যক্রম। সেই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৬ জন। যা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের চেয়েও ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৬ জন কম। অর্থাৎ প্রত্যেক ডোজে দফায় দফায় ভ্যাকসিন গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে মানুষ।
জেলা ভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, বরিশাল জেলায় ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ২২৪ জন প্রথম, ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৭ জন দ্বিতীয় এবং ৬ লাখ ৫১ হাজার ১৮ জন বুস্টার গ্রহণ করেছেন। পটুয়াখালীতে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৬৬২ জন প্রথম, ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮৩ জন দ্বিতীয় এবং মাত্র ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪১ জন নিয়েছেন বুস্টার ডোজ। ভোলায় প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৯ জন, দ্বিতীয় ডোজ ১২ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৩ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৯ জন।
পিরোজপুর জেলায় প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৯২ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৮ লাখ ১০ হাজার ১৫৩ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ১ হাজার ৪০৫ জন। বরগুনা জেলায় প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৮ জন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭ লাখ ২ হাজার ৬২৮ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৫২ জন। ঝালকাঠি জেলায় প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৭ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮ জন এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫১ জন।
আর শিক্ষার্থীদের মাঝেও ভ্যাকসিন গ্রহণে অনাগ্রহ রয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তর পরিচালিত চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, বিভাগের ছয় জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ১২ লাখ ২৪ হাজার ১২০ জন। তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৩ জন। অর্থাৎ ভ্যাকসিন নেয়নি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৭ জন। ওদিকে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩১ জন।
বিভাগে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৩ জন শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ১৪৬ জন প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেন ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ৭২২ জন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেনি প্রথম ডোজ গ্রহণকারী ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪২৪ জন। এ ছাড়া বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ জন। বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেনি দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করা ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৩ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ন শাহীন খান বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণে গোটা দক্ষিণাঞ্চলব্যাপী আমরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। মানুষকে ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহি করে তুলতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ নেয়নি- এটি সত্য। আমি মনে করি, করোনার প্রার্দুভাব কমে আসায় মানুষ টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তাছাড়া বুস্টার ডোজ গ্রহণ যদি বাধ্যতামূলক করা হতো তাহলেও হয়তো এত মানুষ বুস্টারের আওতার বাইরে থাকত না।
এই কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মাঝে বিভিন্ন কুসংস্কার কাজ করে। সেগুলো কাটিয়ে যা দেওয়া হয়েছে সেই সংখ্যাও কম না। জানি না পরবর্তীতে করোনার প্রকোপ কী মাত্রায় আসবে, তবে পরিস্থিতি অনুসারে বলা যাবে ভ্যাকসিন না নেওয়ায় কতটা সংকটে পড়তে হতে পারে আমাদের।