জাগোকন্ঠ ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির নলছিটিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার ৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঝালকাঠি-২ আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. আমির হোসেন আমু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সর্দার মো. শাহআলম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আ্যাড. খান সাইফুল্লাহ্ পনির।
এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিদ্দিকুর রহমান, পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ ওয়াহেদ খান, উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নলছিটি উপজেলা আহবায়ক লাইজুর রহমান রিয়াজ, ডা. ইউসুফ আলী তালুকদারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা পাকহানাদার মুক্ত হয়। একদিকে পাকবাহিনীদের রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে, অন্যদিকে দলে দলে গ্রামবাংলার মানুষ রাস্তায় নেমে জয় বাংলার স্লোগান দেন। মুক্তির সাদ পায় ঝালকাঠিবাসী।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝালকাঠির নিয়ন্ত্রণ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। ২৭ এপ্রিল হেলিকপ্টার থেকে অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গানবোর্ড থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে করতে পাকবাহিনী ঝালকাঠি আক্রমন করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। হানাদার বাহিনী শহরের দখল নিয়ে ‘দ্বিতীয় কোলকাতাখ্যাত’ দেশের বৃহত্তম এ বানিজ্য বন্দরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও বাড়িঘর। এর পর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনীর সহায়তায় নির্বিচারে গনহত্যা, লুট-পাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয় নিরিহ মানুষের ওপর। পাকবাহিনী শহরের পালবাড়ির একটি দ্বিতল ভবনে ‘টর্চারসেল’ স্থাপন করে মুক্তিকামী মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। শহরের পৌরসভা খেয়াঘাট, পালবাড়ি গোডাউনঘাট, রমানাথপুর মসজিদ সংলগ্ন পুকুর পাড়, দেউলকাঠি, গাবখান, খেজুরা গ্রামে শত শত নিরিহ বাঙ্গালীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৭ ডিসেম্বর বিকেলে পাক মিলিশিয়া বাহিনী ঝালকাঠির উত্তর অঞ্চলে অভিযান শেষে নৌপথে বরিশাল ফেরার সময় ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি চরে ২৭-২৮ জনের একটি রাজাকারের দল নামিয়ে দিয়ে যায়। এসময় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনতা তাদের ঘেরাও করে মারধর করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সোপর্দ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ঝালকাঠি থানা ঘেরাও করলে ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র সমর্পন করে। মুক্ত হয় ঝালকাঠি।
একই দিন পাকহানাদার মুক্ত হয় নলছিটি। ৭ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করে রাজাকারদের নিরস্ত্র করেন। ৮ ডিসেম্বর সকালে নলছিটি থানা আক্রমনের খবর পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুলিশ ও রাজাকার আলবদররা। এক পর্যায়ে কোন রক্ষপাত ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধারে কাছে আত্মসমর্পন করে তারা। সব মিলিয়ে ৬০-৭০ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় তালতলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। পরের দিন ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি ও নলছিটি শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পতাকা হাতে মুক্তিকামি মানুষের ঢল নামে। জয় বাংলার স্লোগানে মুখরিত হয় ঝালকাঠি ও নলছিটি শহর।
হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনও এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, বধ্যভূমিতে পুস্পমাল্য অর্পন, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা।