দেশজুড়ে

আসন্ন কোরবানী ইদের জন্য নওগাঁয় প্রস্তুত ৪লাখ গবাদিপশু

  জাগোকন্ঠ 1 July 2022 , 3:56 pm

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মুসলিম ধর্মের মানুষদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব হচ্ছে ইদ-উল-আযহা। এই ইদ আমাদের দেশে কোরবানীর ইদ হিসেবেই বেশি পরিচিত। আগামী ১০জুলাই কোরবানীর ইদ উদযাপন হতে যাচ্ছে। আর এই ইদের প্রধান আনন্দ হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে খুশি করতে সুন্দর গবাদিপশুকে জবাই করা। আর তার জন্য পুরো বছর জুড়েই চলে তারই প্রস্তুতি। আর এই ইদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে জেলায় খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ৪লাখ ৩৩হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে-ষাঁড়, বলদ, গাভী (বাচ্চা উৎপাদনে অক্ষম) মহিষ ও ছাগল।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে জেলার ১১টি উপজেলায় এবার ৪লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি গবাদিপশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৪২হাজার ৪২০টি, রাণীনগরে ৪১ হাজার ৭৪১টি, আত্রাইয়ে ২৪ হাজার ৭৮৩টি, ধামইরহাটে ৪৪ হাজার ৮২৫টি, বদলগাছীতে ৩২ হাজার ৩৭৯টি, নিয়ামতপুরে ৩২ হাজার ৯৬টি, পোরশায় ৩৩ হাজার ৪৩৬টি, সাপাহারে ২৮ হাজার ৭৬৬টি, মহাদেবপুরে ৪২ হাজার ৫৮৯টি, পতœীতলায় ৪৬ হাজার ৮১০টি এবং মান্দায় ৬৩ হাজার ২২৮টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

জেলার বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে জানা যায়, ইদ-উল-আযহা উপলক্ষে ভালো দামের আশায় খামারীরা পশু লালন-পালন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। খরচ বেশি হলেও ভালো দাম পাওয়া নিয়ে আশা করছেন খামারীরা। অন্যদিকে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ যেন না করতে পারে তারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

সদর উপজেলার মৃধাপাড়া এলাকার সজিব এ্যাগ্রোর মালিক মো. সজিব হোসেন বলেন, আমার খামারে ৯০টি ষাড় গরু রয়েছে। গরুগুলোকে লালন-পালন ও পরিচর্যা করে ক্রেতার মনের মত করতে চেস্টা করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে গরুগুলোকে বাজারে বিক্রি করা শুরু করবো। গত ১০ মাস আগে গরুগুলোকে কিনেছি মোটা-তাজা করে ইদে বিক্রি করার জন্য। প্রতিটি গরু ৭০-৮০ হাজার টাকায় কিনেছি। প্রতিদিন প্রতিটি গরুর জন্য খাবার বাবদ খরচ হয় ৩০০ টাকার মত। হয়তো সব খরচ বাদ দিয়ে গরু প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মত লাভ হবে।

রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের খামারি রফিকুল আলম বলেন, আমার খামারে ১০টি গরু ও ৫টি ছাগল আছে। ১বছর আগে ৫০-৬০ হাজার টাকায় গরু এবং ৭-৮ হাজার টাকা উন্নত জাতের প্রতিটি ছাগল কিনেছিলাম। ভালো দাম পাবার আশায় পরিচর্চা করে যাচ্ছি। গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। ভারতীয় পশু দেশে না ঢুকতে দিলে, ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। ভারতীয় পশু যেন দেশে না ঢুকতে পারে সেজন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি করছি।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মহির উদ্দীন বলেন, ইদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে জেলায় খামারী ও ব্যক্তি পর্যায়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে শুধু গরুই ৬৭হাজার। জেলায় প্রায় ২৫ হাজারের মত খামার রয়েছে। গত বছর ২লক্ষ ২৫ হাজার কোরবানী হয়েছিল। এবারে জেলায় প্রায় ৩ লাখের বেশি কোরবানী হবে বলে ধারনা করছি। জেলায় কোরবানীর জন্য পশুর সংকট হবে না। চাহিদার তুলনায় জেলার খামারগুলোতে পশু বেশি থাকায় এবার অন্য কোথাও থেকে পশু আনার প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও বলেন, জেলার খামারীরা কোরবানীর পশু বিক্রির জন্য ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশুগুলোকে মোটাতাজা করার জন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বা ওষুধ খাওয়ানো হয় না। সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। মাঠের সবুজ ঘাস, ভুশি, খৈল, চালের গুড়া, ছোলা খাওয়াচ্ছেন। আর পশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখতে আমরা খামারীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় ভারতীয় পশু দেশে অবৈধ ভাবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ে আসে, যার কারনে প্রকৃত খামারিরা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কারন ভারতীয় গরু আসার কারনে দাম অনেক কমে যায়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি এসব ব্যাপারে নজরদারি করছেন।

আরও খবর: