আইন-আদালত

জাতীয় দিবস ও আপ্যায়নের নামে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ অধ্যক্ষের

  জাগোকন্ঠ ৩০ আগস্ট ২০২৪ , ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

শরীয়তপুর সদর, প্রতিনিধি:

শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার ও অতিথি আপ্যায়নের বিভিন্ন খরচের ভুয়া বিল ভাউচার করে লক্ষাধিক টাকা আত্মসতের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন মৃধার বিরুদ্ধে।

তিনি ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক অবকাঠামোর জিনিস পত্র তিনি একাই ক্রয় করতেন। এতে ক্রয় কমিটির কোন সহযোগিতা তিনি নিতেন না।বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারে শিক্ষকদের কাছে স্বাক্ষর নিতেন তিনি।

খোজ নিয়ে জানা যায়, গেল ২৩-২৪ অর্থবছরের শুধুমাত্র ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লাইটিং খরচ ১৬ হাজার ও আপ্যায়ন খরচ ৮ হাজার টাকার ভুয়া ভাউচার করে পুরো টাকা তুলরছেন ঐ অধ্যক্ষ। তবে ২৬ শ মার্চ ও ১৭ ই মার্চ সে সময় রমজান মাস সে সময় কিভাবে সে আপ্যায়ন করেছেন ছাত্র ছাত্রীদের সে বিষয় প্রশ্ন? এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ডিজিটাল ব্যানার নাম বানিয়ে ও এ ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির জন্য ৪-৫ শত লিফলেট ছাপিয়ে বিল করেছেন ৬ হাজার লিফলেটের বানানোর খরচ। বছরে দুবার অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ বাজেট আসলেও এ প্রতিষ্ঠানে কোন রকমের দৃষ্টি আকর্ষণ ভাবে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়নি। গেল ৭ই মার্চে একটি গাঁধা ফুলের মালা দিয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় প্রতিষ্ঠানটি তবে এর বিনিময়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে উত্তোলন করা হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। গত জুন মাসে বছরের দ্বিতীয় ধাপে ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দের টাকা আসলে বিভিন্ন ভুয়া ভাউচার তৈরি করে মালামাল ক্রয় দেখিয়ে পুরো টাকাই তিনি নিজের পকেটে ভরেছেন। বিভিন্ন ভাউচারের স্বাক্ষর জোরপূর্বক নিতেন বলে দাবি ইন্সট্রাক্টরদের। এবং প্রতিষ্ঠানটির তলা ভবনের একটি কক্ষে তিনি আবাসিক ভাবে বসবাস করেন যেটি সরকারি বিধিমূলক অবৈধ।যদিও এরকম অনিয়মের অভিযোগ অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন মৃধার বিরুদ্ধে নতুন নয়। গণমাধ্যমের খবরের তথ্যঅনুযায়ী ঝিনাইদ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পানিশমেন্ট বদলি করা হয়েছিল। সে বিষয়ে বিভাগীয় মামলা হয়ে তদন্ত চলছে ।

নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী বিজয় বলেন,প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের বিশুদ্ধ পানি স্কুলের মাঠ পরিষ্কার করে দেয় নাই কখনো। তার বিভিন্ন সময় সরকারি দিবস ও তেমন খরচ না করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।এবং ২৬ শে মার্চ রমজানের দিন আমাদের কোন আপ্যায়ন করে নাই আমরা রোজা থেকে কিভাবে রমজানের দিন খাব।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের হিসাব রক্ষক সেলিম রেজা বলেন, অধ্যক্ষ সাজ্জাদ স্যার ২৬ মার্চে কোন লাইটিং করে নাই। অথচ সেখানে লাইটিং খরচ বাবদ আমাকে দিয়ে একটি ভূয়া বিল তৈরি করায়। আমাকে বেশিরভাগ সময় জোরজবরদস্তি করে কাজ করাতেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইন্সট্রাক্টর (বাংলা) ছাইদুর রহমান সাগর বলেন,আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার সব সময়ই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিবসের খরচের নামে ভুয়া ভাউচার করে করে । এবং সেসব ভাউচারে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও হিসাবরক্ষকসহ অনেককে দিয়েই বাধ্যতামূলক স্বাক্ষর নেয়। বিভিন্ন সময় আমাদের বেতন বেল আটকিয়ে রাখে। তাই আমরা অধিদপ্তরে ডিজি মহোদয়ের কাছে অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন নির্ধার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি আমরা অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইন্সট্রাক্টর)(গনিত) খাঁন মাসুম বিল্লাহ বলেন,সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ছাত্ররা আমাদের প্রিন্সিপাল সাজ্জাদ হোসেন মৃধার অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন করেছিল। সেখানে ছাত্ররা বিভিন্ন বিল ভাউচার সহ অনেক ভুয়া অনিয়ম করে টাকা আত্মসাৎ এর প্রমাণ পায়। এবং আমরাও এর আগে একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম তার বিরুদ্ধে। ছাত্রদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে তিনি আমার কাছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষা কার্য পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। আমরা আশাবাদী আমাদের অধিদপ্তর তার এই অনিয়মের তদন্ত করে বিচার করবেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সাজ্জাদ হোসেন মৃধা বলেন, আমি কোন অনিয়ম করিনি। আমি সরকারি দিবসে যা যা ভাউচারে লিখেছি তাই খরচ করেছি। আপাততভাবে এখন আমি ওই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কার্যক্রম করছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,অভিযোগের পরে আমরা একজনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। ও ওইখানের প্রিন্সিপাল সাজ্জাদ হোসেন মিতাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শা/ শ/ হ

আরও খবর: