দেশজুড়ে

ভেদরগঞ্জে সরকারি খালে একাধিক বেড়িবাঁধ, পানি নিষ্কাশন বন্ধে কৃষকের ভোগান্তি

  জাগোকন্ঠ ৫ মার্চ ২০২৩ , ৭:৪০ অপরাহ্ণ

মাহাবুব তালুকদার:

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলাধীন সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মল্লিক কান্দিতে চলমান সরকারি খাল বন্ধ করে বাড়ির রাস্তা নির্মান করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। এতে করে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে স্থানীয় কৃষকদের নানা ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে। খালটিতে রাতের আধারে একের অধিক বেড়িবাঁধ দিয়ে বসত বাড়িতে চলাচলের রাস্তা নির্মান করেছে বলে জানা যায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সখিপুর থনার ডাকবাংলা এলাকা হয়ে মল্লিক কান্দি ভায়া মৃধা কান্দি বালার বাজারের সাথে যুক্ত একটি চলমান সরকারি খাল বন্ধ করে স্থানীয় বাসিন্দা মনির মিঝী(৪০)সহ আরো ছয়টি বাড়িতে যাতায়েতের জন্য রাস্তা নির্মান করেছে। এখন রবিমৌসুমে কৃষকের যেসব ফসল হয় কোন কোন ক্ষেতে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হলে পানির অভাবে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। ঐ এলাকায় প্রায় ৫০০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। সেখানকার ২০০ জন মানুষ কৃষি পরিবার কৃষি নির্ভর। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন এই খালটি দ্রুত খনন করা প্রয়োজন। দ্রুত খালটিকে বাচাঁনো না হলে ভবিষ্যতে এ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি বিশেষ করে বন্যার সময় আমাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। খাল বন্ধ করায় খালটি মরে পানি প্রবাহ বন্ধ করছে স্থানীয় মনির মিঝী, সোলেমান মল্লিক,আমির হোসেন সরকার, বসির আহমেদ, লিটন বেপারী, রাজা মিয়া বেপারী। তাদের কেউ কেউ এই খালকে নিজস্ব মালিকানা দাবি করছেন। ডাকবাংলার উত্তর পাশে খালের উত্তর পাশে সখিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সুদেব দাসের বাড়ির সামনে তিনি কাঠের পোল করেছেন। তাই দ্রুত খালের অবৈধ ভাবে রাস্তা নির্মান উচ্ছেদ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

সোলেমান মল্লিক বলেন, আমি একজন কৃষক আমি বাড়ি করেছি খালের পশ্চিম পাশে। তাই আমার বাড়িতে চলাচল করতে একটা পোল দরকার ছিলো। মেম্বারের কাছে জানাইছি সরকারিভাবে একটা কাঠের পোল যদি করে দিত তাহলে ভালো হতো। তাই কষ্ট বিষ্ট করে মাটি দিয়ে রাস্তা করেছি। তবে রাস্তা করার সময় সরকারি লোক এসে বাা দিয়েছে। তারপরেও আমাদের দরকার তাই রাস্তা করেছি। খালটি ব্রিটিস আমল থেকেই দেখে আসছি। এখন খালটা সরকারি জায়গায় হলেও খালে পানি নেই। আমি তো একাই রাস্তা করি নাই আরো ৬ জনও খাল বন্ধ করে রাস্তা করেছে। সরকার যদি বলে আমি রাস্তা ভেঙ্গে সাঁকো বানাবো।

খাল দখলকারী মনির মিঝী বলেন, এই খাল আমাদের ব্যক্তিগত জমি। মরা খাল তাই রাস্তা বানিয়ে বন্ধ করেছি। এই খালে আরো অনেকেই এর আগে রাস্তা নির্মান করেছে। এসিল্যান্ড স্যার এসেছিলো এসে আমাদের রাস্তার কাজ করতে নিশেধ করেন। তবেআমি নতুন বাড়ি করেছি আমাদের বাড়িতে রাস্তা প্রয়োজন তাই বানিয়েছি।

স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই তো খালে পানি শুখিয়ে গেছে। তাঁর উপর খাল বন্ধ করে বাড়ির বাস্তা নির্মান করেছে কিছু প্রভাবশালী লোকেরা। আমরা ক্ষেতে পানি দিবো কিভাবে? যদি পানি না দিতে পারি ফসলের ভালো ফলন হবে কিভাবে। প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কিভাবে হবে। আমরা প্রাধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করি ও টিউনো স্যারের কাছেও আবেদন জানাই তাড়াতাড়ি রাস্তা গুলা সরাইয়া খালটি দখল মুক্ত করে।

এ বিষয় সখিপুর ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা সুদেব বাবু বলেন, ঐ খালটি ১ নং খতিয়ানে বহু পুরানো খাল। আমার বাড়িও সেখানেই। আমার বাড়ির খালের উপরে আমি একটি কাঠের পোল বানিয়ে চলাচল করছি। তবে এখানে যারাই রাস্তা নির্মান করেছে তাদের সকলকে আমি গিয়ে বাধা দিয়েছি। তবে তাঁরা কেউ আমার কথা রাখেনি। মনির মিঝীকে আমি নিষেধ করার পরে কাজ করায় আমি ততকালীন এসিল্যান্ড সংকর চন্দ্র বৈদ্য স্যারকে জানালে তিনি নিজে এসে তার কাজ বন্ধ করে দেয়। তার পরেও রাতে রাতে মাটি দিয়ে সে খালটি ভরাট করে ফেলেছে। প্রতিটা রাস্তা নির্মানের সময় বাঁধা দিলেও সকলেই আদেশ অমান্য করে রাতে রাতে কাজ করে ফেলে।

সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার বলেন,খালটি যদি সরকারি খাস খতিয়ানের হয়ে থাকে। এর আগে এসিল্যান্ড স্যার বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করেছিলো। তবে তারা সেই আইন ভঙ্গ করেছে। তাই এবিষয় উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে আমি সহযোগীতা করতে প্রস্তুত।

এ বিষয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) ফাতেমা ইসলাম বলেন, কৃষকদের ফসল ভাল ফলন ফলাতে হলে সব উপকরন থালেও এর মধ্যে পানির প্রয়োজন আছে। এলাকাভিত্তিক খাল নদী নালাগুলো কৃষকদের প্রাণ। তাই সেচের ব্যবস্থা না থাকলে কৃষি ফলন ফলাতে ব্যহত হতে হয়। সখিপুরের খালটির উপর রাস্তা নির্মানের জন্য ঐ এলাকার কৃষকদের ভোগান্তি হচ্ছে। তাই যারা খালটি বন্ধ করে রাস্তা নির্মান করেছে তাদের উচিৎ রাস্তা কেটে সেখানে ব্রিজ অথবা কাঠের পোল বানানো। তাহলে কৃষি ফলন বৃদ্ধি পাবে।

এবিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারি খাল বন্ধ করা আইনগতভাবে বিধিনিষেধ রয়েছে। আমি আপনার কাছ থেকে শুনেছি। কেউ যদি এরকম চলমান খাল বন্ধ করে রাস্তা করে তাহলে শীঘ্রই সেগুলো উচ্ছেদ করবো।

আরও খবর: