জাতীয়

দাবদাহে ‘পৌষ মাস’ ফ্যান বিক্রেতাদের

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৭ জুন ২০২৩ , ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার ফার্মগেটে পরিবার নিয়ে থাকেন রিয়াজুল করিম। স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তার সংসার। লোডশেডিং পরিস্থিতির অবনতিতে বৃদ্ধ মা ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছেন রিয়াজুল।

লোডশেডিংয়ে ঘরের ফ্যান না চলায় তাকে ছুটতে হয়েছে চার্জার ফ্যান কিনতে। কিন্তু ফার্মগেট এলাকা ঘুরে কাঙ্ক্ষিত চার্জার ফ্যান পাননি তিনি। এই ফ্যানের আশায় পরে তিনি যান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেটে। সেখানে একটি দোকানের সঙ্গে কথা হয় রিয়াজুলের।

রিয়াজুল বলেন, ভাইরে এ রকম গরম আগে দেখিনি। তার ওপর কারেন্ট (বিদ্যুৎ) থাকে না। রাতে কারেন্ট গেলে ঘুমানো যায় না। মা আর শিশুদের নিয়ে যত বিপদ। ফার্মগেটে মন মতো চার্জার ফ্যান না পাওয়ায় এখানে এসেছি। কিন্তু এখানে ফ্যানের অনেক দাম দেখছি।

গত কয়েকদিন ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে লাগামছাড়া লোডশেডিং। এর সঙ্গে রয়েছে তাপপ্রবাহ। একদিকে লোডশেডিং আর অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত।

এ পরিস্থিতিতে একটু স্বস্তির আশায় রিয়াজুলের মতো অনেকে ছুটছেন চার্জার ফ্যান কিনতে। আর এ সুযোগে ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ থাকলেও সেসব টিকছে না বিক্রেতাদের কাছে। বাধ্য হয়ে বেশি দামেই ফ্যান কিনতে হচ্ছে তাদের।

সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করে দেখা গেছে, চার্জার ফ্যান কিনতে দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। চাহিদা এতটাই বেশি যে বিক্রেতারা দ্বিতীয় দফায় ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন। অনেকটা একদরে বিক্রি করার মতো অবস্থা, যদিও এসব দোকানে দরদাম করে বেচাবিক্রির রীতিই প্রচলিত।

ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে অনেক দোকানে বাড়তি কর্মচারীও রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানকার অনেক দোকানী যারা কখনও ফ্যান বিক্রি করেননি, তারাও এখন ফ্যান বিক্রি করছেন।

দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ডিফেন্ডার, ভিক্টর, সানকা, মিয়াকো, নোভা ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সাইজের এসব চার্জার ফ্যানের দাম  ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে। তবে দেখা মেলেনি ওয়ালটন কিংবা ভিশনের মতো ব্র্যান্ডের ফ্যানের।

দোকানীরা বলছেন এ মার্কেটে যত চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই চাইনিজ পণ্য। এসব চার্জার ফ্যান তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। তবে ব্যাকআপের সময় নিয়ে বেশিরভাগ দোকানি মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাত ৮টাতেও এ মার্কেটের এইচ রহমান অ্যান্ড কো. দোকানে চার্জার ফ্যান কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। দোকানের কর্মচারী আব্বাস মিয়ার সঙ্গে ক্রেতারা দাম নিয়ে দ্বিতীয় দফায় কথা বলতে গেলেই তিনি রেগে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ক্রেতারা ফ্যান না কিনে দোকানে অবস্থান করুক, সেটাতেও তার আপত্তি।

আব্বাস জানান, বিদ্যুৎ থাকে না, সেজন্য ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। আগে যেখানে সপ্তাহে ১০০টা ফ্যান বিক্রি করা যেত না এখন দিনে ৫০টার বেশি বিক্রি হচ্ছে।

ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় বিভিন্ন দোকান ঘুরে বাসার জন্য দুটি চার্জার ফ্যান কেনেন সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আলতাফ হোসাইন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ থাকে না ঠিক মতো। দিনের চেয়ে রাতে বেশি ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করে। বাচ্চারা ঘুমাইতে পারে না। বাসার অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

এই মার্কেটের পা‌য়েল ইলেকট্রনিক্স অন্য সময়ে মূলত বিভিন্ন ক্যামেরার আইটেম বিক্রি করে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোতে চার্জার ফ্যান বিক্রির হিড়িক দেখে এ দোকানিও এখন ফ্যান বিক্রি করছেন।

দোকানের মালিক সম্রাট বলেন, ‘গত ১২ থেকে ১৩টা দিন মানুষ গরমে পুরা পাগল হয়ে গেছে। মানুষতো চার্জার ফ্যান ধুমাইয়া কিনতেছে। ভাবলাম ক্যামরার পার্স বিক্রিতো কম হচ্ছে, টাকা বুকে লইয়া লাভ নাই, কাজে লাগাই। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭টা করে ফ্যান আনছি, বিক্রি করে দিচ্ছি। যে ফ্যান আগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারে পাওয়া যেত, সেটা এখন সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরম বেশি পড়ার সঙ্গে লোডশেডিং বাড়ার কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। এতে পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে এবং দামও বেড়েছে। তবে বড় আমদানিকারকদের কাছে এখনও ফ্যান আছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

নারায়ণগঞ্জ ইলেকট্রনিকস থেকে দুটি চার্জার ফ্যান কেনেন দুই বন্ধু হাবিব-ইয়াকুব। ইয়াকুব বলেন, আমাদের বাসা বাংলামোটর। ওই দিকের দোকানে চার্জার ফ্যান খুব কম। যার জন্য দাম বেশি চায়। সেজন্য ঠিক করলাম অফিস শেষে বায়তুল মোকাররম এলাকায় যেহেতু এসব ফ্যানের অভাব নেই, দামটা কম হবে; কিন্তু এখানেও দেখি অনেক দাম। সাড়ে পাঁচ হাজার দিয়ে দুইটা কিনলাম।

গ্রিন রোড, কলাবাগান এবং পান্থপথের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার হাতেগোনা কিছু দোকানে চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। তবে সেটাও পরিমাণে খুব কম। গ্রিন রোডের আলমাস ইলেকট্রনিক্সের ম্যানেজার নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে ১০টার মতো চার্জার ফ্যান আছে। চাহিদা আছে চার্জার ফ্যানের। কিন্তু দাম বেশি দেখে অল্প করে এনে বিক্রি করছি।

তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিং মিলে যে অবস্থার তৈরি হয়েছে এই অবস্থা থেকে সহসা মুক্তির আশাও দেখা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরও দু’সপ্তাহ থাকছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আরও দুই সপ্তাহ এ অবস্থা থাকতে পারে। আগামী দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে গত পরশু আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, অস্বস্তিকর এই গরম আরও পাঁচ-ছয়দিন থাকবে।

আরও খবর: