ক্যাম্পাস

জাবির মুরাদ চত্বর মানেই কাজলের চা

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ২৩ জুলাই ২০২৩ , ১২:২০ অপরাহ্ণ

চায়ের কাপের টুংটাং শব্দে সকাল শুরু হয় কাজলের। ভোরের পাখি জেগে উঠার আগেই তাকে উঠতে হয়। সবকিছু গুছিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জেগে ওঠার আগেই যে তাকে যেতে হবে। তারপর সারাদিন বিরতিহীন টুংটাং চা চক্রে জীবন চলতে থাকে তার।

পুরো নাম জিয়াউল কবির কাজল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালোবেসে ‘কাজল ভাই’ বলে ডাকেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানায়। বর্তমানে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ভীষণ এক প্রিয় নাম কাজল ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে একটি টং দোকানে বিগত ১৫ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন কাজল। চা বিক্রি করেই চলে সংসার। বড় করেছেন তিন সন্তানকে। একেবারেই সহজ-সরল মানুষটি দিনরাত চা সরবরাহ করে যান শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি ঘুরতে আসা পর্যটক সবাই কমবেশি তার চায়ের ভক্ত। আর এ কারণেই কাজলের চায়ের দোকানে সব সময় থাকে উপচে পড়া ভিড়।

dhakapost

কাজল ভাইয়ের কথা বলতেই কথার ঝুড়ি খুলে বসেন ৪৮তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আশা। তিনি বলেন, কাজল ভাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ। আমার সকাল শুরু হয় কাজল ভাইয়ের চা দিয়ে। কাজল ভাইয়ের চা না খেয়ে কখনো ক্লাস করতে গেছি এটা আমার মনে পড়ে না। তার দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া, পড়াশোনা নিয়ে কথা বলা এমনকি আমাদের প্রেজেন্টেশন পর্যন্ত তৈরি করা হয়। তিনি আমাদের আবেগের একটা অংশ হয়ে গেছেন।

দর্শন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহান আনজুম তানজিল বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে যে দোকানে আমার সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে তা হলো কাজল ভাইয়ের দোকান। কাজল ভাই আমাদের আত্মার সঙ্গে মিশে আছে। ক্যাম্পাসের অনেক জায়গাতেই চা পাওয়া যায় কিন্তু চায়ের সঙ্গে যে মমত্ববোধ, যে ভালোবাসা থাকে সবকিছু নিয়েই আমাদের কাজল ভাই এবং তার চা। মুরাদ চত্বরে কাজল ভাই নেই মানে এখানে আসার কোনো মানে আমার কাছে নেই। কাজল ভাই এবং মুরাদ চত্বর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

আরেক শিক্ষার্থী সামিহা তাসনিম  বলেন, আমরা চা খাব এটা বলাও লাগে না। তার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালেই তিনি বুঝে যান যে একটা দুধ চা লাগবে। কাজল ভাই মনের মানুষ, কাছের মানুষ, নিজের মানুষ।

dhakapost

সদালাপী কাজল সব সময় মুরাদ চত্বর মাতিয়ে রাখলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলার কথা বলতেই লজ্জায় মুখ ঢাকতে চাইলেন। তবে লুকিয়ে থাকার ব্যর্থচেষ্টা ঠেলে বললেন ভালোবাসার কথা, মায়ার কথা।

জিয়াউল কবির কাজল বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দোকান করি। প্রতিদিন তিন থেকে চার শ কাপ চা বিক্রি করা হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন আমার কাছে একটা পরিবার। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানেই কেটে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা আমি পেয়েছি সেই হিসেবে আমি ভাগ্যবান। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেককিছু দিয়েছে। আজীবন এই ভালোবাসা আমি পেতে চাই।

আরও খবর: