আন্তর্জাতিক

উইঘুর নির্যাতন : জাতিসংঘে চীনের বিরুদ্ধে যায়নি মুসলিম দেশগুলোও

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৮ অক্টোবর ২০২২ , ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে অর্থাৎ ইউএনএইচআরসিতে চীনের বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। উইঘুর মুসলিম ইস্যুতে তোলা প্রস্তাবটি কেন পাস হলো না তা নিয়ে অনেক মুসলিম দেশেই প্রশ্ন উঠছে।  

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইউএনএইচআরসিতে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়েছিল।

প্রস্তাবটি পাস হলে মার্চে পরবর্তী অধিবেশনে উইঘুর মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে আলোচনা হতো, কিন্তু ৪৭ সদস্যের কাউন্সিলে ১৭টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং ১৯টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়।

যে ১৯টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তারা চীনকে সমর্থন করেছে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো এই প্রস্তাবের সমর্থনে ইউএনএইচআরসিতে ভোট দিয়েছিল।

তবে ভারত, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো এবং ইউক্রেনের মতো দেশ এই প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটির সময় হাউসে উপস্থিত ছিল না।

এই প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ার পর বিবৃতি জারি করেছে চীন। এতে তারা বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘পরিষ্কারভাবে সচেতন’ যে যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশ জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য কিছু পশ্চিমা দেশ জিনজিয়াং সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে চায় যাতে চীনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং এর উন্নয়ন সীমিত করা যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করা যাবে না।

ইন্দোনেশিয়া ব্যাখ্যা দিয়েছে
যে ১৯টি দেশ চীনের বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, তার মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া, আরব বিশ্বের কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মুসলিম দেশ রয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তানের মতো মুসলিম প্রধান দেশগুলোও চীনকে সমর্থন করেছে।

কেন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে দেশটি। শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ও মানবিক বিষয়ক পরিচালক আচসানুল হাবিব এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাউন্সিলকে এমন একটি প্লাটফর্ম হতে হবে যেখানে সব দেশ নির্দিষ্ট কোনো পক্ষ নয়, বরং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছি কারণ আমরা চাই না যে মানবাধিকার কাউন্সিলের রাজনীতিকরণ হোক এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হোক।

একই সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ইন্দোনেশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধিও সাফাই দিয়েছেন।

ফাবারিয়ান রুডইয়ার্ড বলেন, মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত এমন একটি পরিবেশ তৈরির দিকে মনোনিবেশ করা যা সব দেশকে তাদের মানবাধিকারের দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত করবে।

কাউন্সিলের সদস্যদের তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ এবং প্রাণবন্ত গণতন্ত্র হিসেবে আমরা আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের দুর্দশার কথা জেনে চোখ বন্ধ রাখতে পারি না। আমরা বিশ্বাস করি যে কাউন্সিল আজ যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তা অর্থপূর্ণ অগ্রগতি দেখতে পাবে না কারণ এতে সংশ্লিষ্ট দেশের সম্মতি এবং সমর্থন নেই।

বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও, চীনকে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন দেখে অনেকেই খুব অবাক হয়েছেন।

আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আর অ্যান্ড ডি কর্পোরেশনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশ্লেষক ডেরিক জে গ্রসম্যান টুইট করেছেন এবং ইন্দোনেশিয়ার সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইস্ট তুর্কিস্তান ন্যাশনাল অ্যাওয়েকেটিং মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা সালেহ হুদাইয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়াকে ‘নির্লজ্জ প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

ওয়ার্ল্ড ওয়েইগার কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ডলকান ইসা বলেছেন, কাউন্সিলের সদস্যরা চীনকে অন্যান্য দেশের মতো একই কাতারে রাখার একটি সুযোগ হারিয়েছে।

আরও খবর: