জাতীয়

আমরা দুর্ভাগা জাতি, বঙ্গবন্ধুর মতো বিরল নেতাকে হত্যা করেছি

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ২৬ মার্চ ২০২৩ , ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

আমরা দুর্ভাগা জাতি, বঙ্গবন্ধুর মতো বিরল নেতাকে হত্যা করেছি বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। 

তিনি বলেছেন, যে জাতি আজও স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি, তারা মর্মে মর্মে টের পাচ্ছেন স্বাধীনতা কি জিনিস। আমাদের জাতির পিতা পাকিস্তান সৃষ্টির পরই তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে ধাপে ধাপে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে রোববার (২৬ মার্চ) আগারগাঁওয়ের বন ভবনের হৈমন্তী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ নির্বাচন, ১৯৬৬ ছয় দফা, ১৯৭০ এর নির্বাচন। ধাপে ধাপে তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেতে ২৩ বছর সময় নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। অথচ এই ২৩ বছরের মধ্যে ১৩ বছরই কারাগারে ছিলেন। এমন নেতা বিরল।

বাঙালি দুর্ভাগা জাতি উল্লেখ করে মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা দুর্ভাগা জাতি, যে নেতাকে পাকিস্তানিরা হত্যা করতে পারেনি কিন্তু তাকে হত্যা করল বাঙালিরাই।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু এসব নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল। এই সময়কার প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস জানে না। এই সময় উন্নয়ন তো হয়নি, বরং দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে আবারো স্বাধীনতার স্বাদ, বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, স্বাধীনতার ইতিহাস, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরে আনা হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই ছিল সোনার বাংলা গড়া, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বঙ্গবন্ধু সেই সময় পাননি। তবে তারই কন্যা সেটি করছেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস করে দেওয়া হচ্ছে, মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা, মৃত্যুবরণ করলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার ব্যবস্থা করেছে শেখ হাসিনা।

‘আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা শেখ হাসিনা বলেছেন, সেটি হয়েছে বাংলাদেশ। ২১০০ সালে কি রকম বাংলাদেশ হবে সেটির পরিকল্পনাও করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুদীর্ঘ ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে হয়।’

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যেটুকু সময় পেয়েছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। সারা জাতিকে তিনি গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষার জন্য তিনি ১৯৭৩/৭৪ সালেই অনেক আইন পাস করে ও বাস্তবায়ন করে গেছেন যা আমরা এখন টের পাচ্ছি। যতদিন রবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে স্বাধীনতার স্বাদ ধরে রাখতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ যেকোনো শব্দ উচ্চারণ করতে গেলেই অঙ্গাঙ্গীভাবে আসে বঙ্গবন্ধুর নাম।

dhakapost

‌‘বার বার পরাধীনতা এসেছে, কিন্তু দমে থাকেনি বাঙালিরা। অনেকে অনেক খুশি ছিলাম পাকিস্তান শাসনে। কিন্তু সত্যিকার স্বাধীনতা বলতে যা তা একটি অংশ পেয়েছে আরেকটি অংশকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। কয়েকবছর পরই শুরু হয় স্বাধিকারের চিন্তা। তবে বঙ্গবন্ধুর মতো করে কেউ স্বাধীনতার চিন্তা করেনি।’

‘১৯৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করেও যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারল না তখন মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি দেখা হয়নি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ডাকে মানুষের উদ্দীপনা দেখেছি।’

তিনি বলেন, বন ও বন্যপ্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার যে চিন্তা সেটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশকে সবুজ বিপ্লবের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর আগে আমার জন্ম। আমার সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি নেই। তবে বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি, পড়াশুনায়। আমি মনে করি, আমি বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি। আমার হেরে গেলে চলবে না। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুই আমার আদর্শ।

‘বাংলাদেশে কোভিড আসার আগে কখনো বুঝিনি বাতাসের বিশুদ্ধতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যের মাইগ্রেশন, রিফিউজিদের দুর্বিষহ যন্ত্রণা দেখে আমি আমার স্বাধীনতা উপলব্ধি করতে পারি।’

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোনে দান নয়, অনেক মানুষের রক্তের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা। আমাদের এই স্বাধীনতা এই দেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

আরও খবর: