দেশজুড়ে

শ্রীরামপুরে পদ্মায় ডুবে তিন বছরে প্রাণ গেছে ১৫ জনের

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১২ জুন ২০২৩ , ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুরে গেল তিন বছরে পদ্মা নদীতে ডুবে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। পৃথক পাঁচটি ঘটনায় এই মানুষগুলোর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে নৌকাডুবিতে একই সঙ্গে ৮ জন এবং বাকিদের গোসলে নেমে মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যুর ঘটনার সাক্ষী হতে চান না পদ্মাপাড়ের শ্রীরামপুরের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ প্রতিবছর এই শ্রীরামপুরের পদ্মা নদীতে ডুবে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই স্থানীয় সমাধানের লক্ষ্যে শ্রীরামপুরে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

সর্বশেষ শনিবার (১০ জুন) এই শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে ডুবে দুই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র গোলাম সারোয়ার সাইম (১৭)। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশের মেহেরচন্ডী এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমানের ছেলে। অপরজন রিফাত খন্দকার (১৭)। তিনি নগরীর দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা খাজা মইনুদ্দিনের ছেলে। এই ঘটনার পরে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে এই এলাকার পদ্মা নদীর বাঁধের ধার সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দেওয়া হোক। এতে করে মানুষ সচেতন থাকবে।

পদ্মায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়া রিফাতের মা ইশমত আরা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন। কোনো মায়ের সন্তান যেন ওই নদীর ধারে (পদ্মা নদীর শ্রীরামপুর) না যায়। কেউ যেন না নামে নদীতে। ওখানে সাইনবোর্ড দেওয়া হোক, ব্যানার দেওয়া হোক। তাতে লেখেন এখানে (শ্রীরামপুরে) নদীতে নামলে জরিমানা। এই নদীতে কোনো মায়ের সন্তান যেন পানিতে ডুবে মারা না যায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার এই একটাই আবেদন।’

একই দাবি তুলেছেন শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা রব্বান আলী (৭০)। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই এই পদ্মা নদীর শ্রীরামপুরে মানুষ নদীতে ডুবে মারা যায়। এ বছর মারা গেল দুজন। ‘শ্রীরামপুরের এই পদ্মা বিপজ্জনক’ এমন কথা লেখে সাইনবোর্ড দেওয়া দরকার। তাহলে শ্রীরামপুরের এই ঘাটে মানুষ নদীতে নামবে না। আর নামলেও তারা সতর্ক থাকবে।’

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে ডুবে নগরীর বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা এরফান আলীর মৃত্যু হয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর শ্রীরামপুরে নৌকাডুবিতে দামকুড়ার সোনাইকান্দির সুমন আলীর স্ত্রী আসিয়া বেগম (৩৫) ও একই এলাকার আলম হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগমের (৪৫) মৃত্যু হয়। তার দুই বছর আগে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে ডুবে নগরীর কাজিহাটা এলাকার সন্তোষ ঘোষের ছেলে বিবেক ঘোষের মৃত্যু হয়। একই বছরের ৬ মার্চ শ্রীরামপুরে বরযাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কনেসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, পবার ডাঙ্গেরহাট এলাকার শামীম (৪৮), তার মেয়ে রশ্মি (৭), ও রতন আলী (৩০), এখলাস আলী (২২), চারঘাট এলাকা থেকে মনি খাতুন (৪০), মরিয়াম (৪), কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (১৬), ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১৩) ও খালা আখি খাতুন (২৫)। এই নৌকাডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এই এলাকার বাসিন্দা শাহিন ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই শ্রীরামপুরে এমন প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। বাইরের মানুষ এই দিক দিয়ে নদীতে গেলে আমরা তাদের নিষেধ করি। কিন্তু কেউ শোনে না। তখন লোকজনের সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা হয়। তাই কেউ আর নিষেধ করে না। তবে আমরাও এমন ঘটনার সাক্ষী আর হতে চাই না। আমরাও চাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই শ্রীরামপুরে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হোক। যাতে করে এমন ঘটনা আর না ঘটে। প্রয়োজনে সতর্কীকরণ সাইন বোর্ড দিতে হবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান জানান, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। এখানে একটা স্থানীয় সমধানের লক্ষ্য কিছু করার দরকার। হতে পারে সতর্কীকরণ বিভিন্ন সাইনবোর্ড স্থাপন করা ইত্যাদি।

রাজশাহী সদর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, ‘সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডের বিষয়টি আমরাও ভাবছি। জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি সম্মতি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আবার জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে বসব। আমরা ১০০ গজ দূরে দূরে এই সাইনবোর্ডগুলো দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। টি-বাঁধ (গ্রয়েন) থেকে কাটাখালীর বালুঘাট পর্যন্ত সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হবে।’

রাজশাহী নৌ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মো. শারিয়ার জানান, শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনার খবর বেশি শোনা যায়। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। শ্রীরামপুর এলাকায় লাল পতাকা ও সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

আরও খবর: