দেশজুড়ে

চৈত্রের বিকেলে বিজুর ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না প্রতিযোগিতা

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৫:১৪ অপরাহ্ণ

নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাহাড়জুড়ে বাজছে বৈসাবির সুর। বরাবরের মতোই নতুন বছরকে ভিন্ন আঙ্গিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে পাহাড়ের অধিবাসীরা। পাহাড়ের জনপদ জুড়ে এখন সাজসাজ রব। বাংলা নতুন বছর শুরু হতে আরও কিছুদিন সময় থাকলেও পাহাড়জুড়ে শুরু হয়ে গেছে বৈসাবি উৎসব।

নতুন বছর বরণ উৎসব ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। এই তিন নামের প্রথম অক্ষর এক করেই হয়েছে বৈসাবি। বৈসাবির অংশ হিসেবে রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে নানান আনুষ্ঠানিকতা। ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, স্মৃতিচারণ, পাহাড়ি গানের অনুষ্ঠান, নাটক প্রদর্শনীসহ নানান আয়োজনে মেতে উঠেছে রাঙামাটির বাসিন্দারা।

সেই আয়োজনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজুর অবিচ্ছেদ্য অংশ পাঁজন তোন বা তরকারি রান্না প্রতিযোগিতা। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ২০ জন প্রতিযোগী অংশ নেন।

পাহাড়ে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিহু, বিষু উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার হচ্ছে পাঁজন। পাহাড়ের অধিবাসীদের বৈসাবি উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই এটি। ঐতিহ্যবাহী পাঁজন ছাড়া যেন বৈসাবি অসম্পূর্ণ। এটি মূলত এক ধরণের বিশেষ তরকারি। পরিচিত বিভিন্ন সবজির সঙ্গে পাহাড়ি বিভিন্ন সবজি মিশিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি। এটি শুধু একটি খাবার নয়, পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাছে তাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

dhakapost

পাঁজন শব্দটি এসেছে জুম থেকে। আগে পাহাড়িরা সবাই জুমিয়া ছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন জুমে যেসব সবজি উৎপাদন হয় সেসবের ঔষধি গুণ রয়েছে। সেজন্য জুমের সব সবজি মিশিয়ে তরকারি রান্না করাকে পাঁজন বলা হয়। এই পাঁজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগব্যাধি মুক্ত থাকা যায় বলে বিশ্বাস করেন পাহাড়ের অধিবসীরা। তাই বছর শেষে নতুন বছরে সুস্থ থাকার প্রত্যয়ে পাঁজন খাওয়া হয়।

বিজুর দিনে পাহাড়ি বাড়িগুলোতে অতিথি আপ্যায়নের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে এই পাঁজন। ১১টি পদ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪১টি পদ দিয়ে রান্না করা হয় পাঁজন। অনেকে আবার এর চেয়ে বেশি পদও ব্যবহার করেন। ফুলবিজু শেষে মূল বিজুর দিনে কমপক্ষে ৭টি বাড়িতে পাঁজন খাওয়া আবশ্যক।

বৈসাবি উপলক্ষ্যে প্রায় প্রতিবছর এই পাঁজন রান্না প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পাঁজন রান্না প্রতিযোগিতায় অংশ নেন অনেক পাহাড়িরা। নিজেদের ঐতিহ্যকে দেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা এবং নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য।

পাঁজন রান্না প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিযোগী শীলা চাকমা বলেন, পাঁজন তরকারিটা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মূলত বিজুর সময় আমরা এই তরকারিটা রান্না করি। পাহাড়ি বিভিন্ন সবজির মিশ্রনে এই তরকারিটা রান্না করা হয়। আমাদের চেষ্টা থাকে সর্বোচ্চ বেশি পদ বা আইটেম দিয়ে তরকারিটা রান্না করার।

আরেক প্রতিযোগী বিশাখা চাকমা বলেন, বিজু আসলেই সঙ্গে আরেকটি শব্দ চলে আসে সেটি হলো পাঁজন। পাঁজন ছাড়া বিজু অসম্পূর্ণ। এটি যে শুধুমাত্র ঐতিহ্যের অংশ তা নয়। এটির নানাবিধ ঔষধি গুণও রয়েছে। এটি খেলে ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশারসহ অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আর এই পাঁজন রান্না প্রতিযোগিতা মূলত আমাদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা বড় উপলক্ষ্য।

প্রতিযোগিতার বিচারক রীনা চাকমা বলেন, সারা বছর পাঁজন রান্না করা হয় না। বিজু এলেই এই পাঁজন রান্না হয়। বিজুর আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। প্রতিযোগীদের উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পাঁজন রান্নায় অংশগ্রহণ করাটা আমাদের সবার খুব ভালো লাগে।

আরও খবর: