দেশজুড়ে

উপাচার্যের মনগড়া বক্তব্যের তথ্য প্রমানের আহ্বান কুবি শিক্ষক সমিতির

  জাগোকন্ঠ ১ এপ্রিল ২০২৪ , ৩:০৩ অপরাহ্ণ

কুবি প্রতিনিধি,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সর্বক্ষেত্রে জামাতের অনুসারী বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এএফএম আবদুল মঈন। গত ৩১ মার্চ ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে অনলাইন গণমাধ্যম বাংলানিউজ ২৪। এ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সাত দিনের মধ্যে তথ্য প্রমান উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

রবিবার (১ এপ্রিল) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক(ভারপ্রাপ্ত) ড. মাহমুদুল হাসানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩১ মার্চ ২০২৪, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপাচার্য উল্লেখ করেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বক্ষেত্রে জামায়াতের অনুসারীদের আধিকা রয়েছে” এবং এটি Banglanews24.com সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে একজন উপাচার্য হিসেবে গঠনমূলক সমালোচনায় অংশগ্রহণ না করে তিনি ঢালাওভাবে শিক্ষকদের মিথ্যা কালিমালেপনের অপতৎ পরতায় লিপ্ত হয়েছেন এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করার মাধ্যমে শিক্ষকদের সাথে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছেন যা মোটেও উপাচার্যসুলভ আচরণের মধ্যে পড়ে না। শিক্ষক সমিতি মনে করে এটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সৃষ্ট বিভিন্ন অরাজকতা ধামাচাপা দেওয়ার একটি অপপ্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষকের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ মনে করে মাননীয় উপাচার্য প্রত্যেক শিক্ষকের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ও বিশ্বাসকে আঘাত করেছেন।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে উপাচার্যের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ/পদোন্নতিতে বিধি বহির্ভূত অবৈধ শর্ত আরোপ, ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষকদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা, স্থায়ীকরণ রোধ করা, আইন এর ব্যতায় ঘটিয়ে ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি পরীক্ষার অর্থ আত্মসাৎ, গবেষণা প্রকল্পের তহবিল তসরুফ, তথ্য গোপন করে অবৈধ ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ, নিয়োগে আত্মীয়করণ, যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিযোগ, নানাবিধ আর্থিক দুর্নীতি ও অশিক্ষকসুলভ আগ্রাসী আচরণ এর বিরুদ্ধে শিক্ষকরা তাদের যৌক্তক দাবিসমূহ আদাযে সামষ্টিক প্রতিবাদ করে, যা এখনো চলমান। শিক্ষকদের আন্দোলনের চাপে কোণঠাসা হয়ে এখন তিনি মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তৎকালীন ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমান ০৮ জন শিক্ষকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক। ২০০৭ পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সমমনা রাজনৈতিক দলসমূহজোটের অংশগ্রহণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬৬ জন শিক্ষক এর সিংহভাগ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও চর্চার মাধ্যমে শিক্ষা-গবেষণার উন্নয়ন এবং দেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এ শিক্ষকগণই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে নিরঙ্কুশ ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নীল দলের সদস্যগণ। ২০২৪ সালের শিক্ষক সমিতিতেও নিয়ঙ্কুস সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে নীল দল পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়, যাদের কয়েকজন সদস্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সমিতির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গুটি কয়েক শিক্ষক প্রকাশ্যে ভিন্ন ধারার আদর্শের চর্চা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা এবং সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তি নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ চর্চার অধিকার রাখেন।

কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্য যে বিরুপ মন্তব্য করেছেন, এটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার এবং তার মনগড়া বক্তব্য। এই বক্তব্যের সমর্থনে আগামী সাত দিনের মধ্যে অকাট্য তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের আহ্বান জানাচ্ছি, প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

আরও খবর: