দেশজুড়ে

সেতুর অভাবে দুর্ভোগ ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটি রশিটানা নৌকা।

  জাগোকন্ঠ ২০ মার্চ ২০২৩ , ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

জামালপুর, প্রতিনিধি:

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর- আমখাওয়া ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীর বুকে পারাপারের জন্য সেতু না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ১৫টি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ। নদী পার হওয়ার জন্য চরাঞ্চলের ১৫ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা একটি রশিটানা নৌকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে জিঞ্জিরাম নদী। এই নদীটি ইউনিয়নকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। এই নদীর উপর নবীনাবাদ থেকে সানন্দবাড়ি বাজার পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার লম্বা রশি টেনে নৌকায় পারাপার হতে হয় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ পথচারীদেরকে।

এই নৌকা দিয়েই নবীনাবাদ, কবির পুর, ছিলেটপাড়া,গোয়ালকান্দা, চেংটিমারি, মাদারেরচর, পাথরের চর, মাখনেরচর সহ ডাংধরা ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে থাকেন।

এই নদীর কারণে নবীনাবাদ, ছিলেটপাড়া,কবিরপুর, চেংটিমারি, গোয়ালকান্দা, মাদারচর গ্রাম-সহ পনেরটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সুবিধা না থাকায় নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ।

কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়। এ কারণে ওই চরাঞ্চলের কৃষকরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেও লাভের মুখ দেখতে পারেন না।

একজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যেতে হলেও অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। নবীনাবাদ, ছিলেটপাড়া, গোয়ালকান্দা, বা মাদারেরচর গ্রামের কোনো মানুষ কাজের জন্য উপজেলা শহরে যেতে হলে তাকে কমপক্ষে দুই ঘন্টা সময় বেশি নিয়ে যেতে হয়।

সেতু নির্মাণ না হওয়ায় নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী-সহ সবাই রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। স্থানীয় এলাকাবাসীর ধারণা এই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে জনজীবনে যেমন দুর্ভোগ কমবে তেমনি অর্থনীতির গতিপথও দ্রুত বদলে যাবে।

অবহেলিত নবীনাবাদ গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, এই নদীর কারণে আমরা এই এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে পড়েছি। অবহেলিত চরাঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া না থাকায় এই এলাকার মানুষ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিশেষ করে বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই এলাকার মানুষ নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে থাকায় এই এলাকার জীবনমান এখনো নিম্নমুখী রয়ে গেছে।

নবীনাবাদ গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, জরুরী কোনো রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যেতে হলে অনেক ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। এখানে একটা সেতু হলে মানুষের দুর্ভোগ অনেক কমে যেত।

সানন্দবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক আলহাজ্ব কবি আজিজুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে সানন্দবাড়ী কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা , অথেনটিক সেন্ট্রাল স্কুল, বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্র /ছাত্রীদের যাথা সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত বিঘ্নিত হয়। কচিকাঁচা ছেলে মেয়েদের নদী পারাপারে অনেক সময় ঝুকিপূর্ণ হয়। বন্যার সময় নৌকা ডুবির আশঙ্কা থাকে।

ইউপি সদস্য বাবুল আক্তার জানান, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি সামগ্রী পরিবহনে ঐ এলাকার মানুষ পিছিয়ে আছে। সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে।

চরআমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া জনান, ৫০ বছর ধরে ঐসব এলাকার গ্রামের মানুষ যাতায়াতের ভোগান্তি শিকার হয়ে আসছে। একটি সেতুর অভাবে স্থানীয় মানুষ নানামুখী সমস্যায় রয়েছেন। সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের সুফল আসবে। সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে ভোগান্তি কমবে চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের।

আরও খবর: