দেশজুড়ে

শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও বাড়ির কাজ করানোর অভিযোগ প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে 

  জাগোকন্ঠ ৯ আগস্ট ২০২৩ , ৪:৪৫ অপরাহ্ণ

ভেদরগঞ্জ প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের সখিপুরে ৪২ নং তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক প্রাইভেট পড়ানো ও তাদের দিয়ে নিজের বাড়ির কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে।

রোববার(৫ আগষ্ট) ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক “সদস্য আফসানা আক্তার। এ নিয়ে স্কুলটির সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমানের জন্য ১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুসতান নিহাকে তার বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। এবং প্রাইভেট পড়তে গেলে নিয়মিত শিক্ষিকার বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার, বাড়ির বাগান ও রাস্তা ঝাড়ু দেয়া ,ও ঘর গোছানোর কাজ করান। একদিন মুসকান কে দিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করানোর পরে বাড়িতে এসে মুসকান বমি করে। এর পর তার মা আপসানা বিষটি নিয়ে প্রতিবাদ করলে ঐ শিক্ষার্থীর উপর আরো অত্যাচার শুরু করেন প্রধান শিক্ষিকা। পরে ঐ শিক্ষার্থীর মা বাধ্য হয়ে স্কুল থেকে টিছি নিয়ে সখিপুর ১ নং সরকারি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনিতে ভর্তি করেন। তাছাড়া স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদেরকে জিম্মি করে রেখেছে এবং তার কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে তা নাহলে পরিক্ষায় ফেল করিয়ে দিবে এমন ভয় দেখাতেন তিনি।

ফাতেমা খাতুন ৪২ নং তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৯ সালে যোগদান করেন। তার পর থেকেই স্কুল চলা কালীন বেশিরভাগ সময় চলাকালিন সময়ে প্রাইভেট পড়ান দিনে মাত্র একটি ক্লাশ করান বাকি সময় বিদ্যালয়ের সিডির রুমে মোবাইল নিয়ে বাস্ত থাকেন।

তাছাড়া প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন মেরামতের (স্লিপ) বরাদ্দের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও রয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাক্ষর জালিয়াতি করে তিনি ২০২০/২০২২ অর্থ বছরের স্লিপ মেরামত প্রকল্পের বরাদ্দের ২ লাখ টাকা মধ্য ৫০ হাজার টাকার কাজ করিয়ে বাকি দেড় লাখ টাকা তুলে নিজের পকেটে ঢুকান।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকাই নয় রয়েছে সহকারি শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ। তিনি চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী জয়ের অভিযোগ পরিক্ষা ফি বাবদ ১০০ টাকা না দিতে পারায় তাকে সদরঘাটে থালা নিয়ে ভিক্ষা করতে বলে স্কুলথেকে তাড়িয়ে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী প্রাক্তন পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী আফসানা বলেন,আমাদের ফাতেমা মেডাম অনেক চাপ দিত প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে আমাদের ফেইল করিয়ে দিবেন। ও মেডামের বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার করাতেন। তাই আমি অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছি।

অভিভাবক তুলসি রানি বলেন, পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রদের ফাতেমা মেডামের কাছেই পড়তে হবে। না পড়লেই ফেল করাইয়া দিব।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য পিয়াংকা মন্ডল বলেন, আমি অভিযোগে সাক্ষর করেছি বলে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েছে ফাতেমা মেডাম ও তার স্বামী।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ মুঠোফোনে বলেন,আমার সাক্ষর নকল করে ফাতেমা মেডাম স্লিপের টাকা উত্তোলন করেছেন। তিনি কাজটি মুটেও ঠিক করেনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমি এই ধরনের কোন আচরন করি নাই। আমি কোন স্লিপের টাকা আত্মসাৎ বা সভাপতির সাক্ষর জালিয়াতি করিনাই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সোবাহান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ইউএনও স্যার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,ঐ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে আইননুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর: