জাতীয়

ট্রাস্টি বোর্ডে এক পরিবারের তিনজনের বেশি নয়

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৭ মে ২০২৩ , ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রসারে ১৯৯২ সালে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর একে একে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২০১০ সালে প্রথম ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন- ২০১০’ করা হয়।

বর্তমানে ১১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসির অনুমতি নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে ১০২টি।

দেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ অবদান রাখছে। বর্তমানে তিন লাখ ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পড়ালেখা করছেন। তবে, সেখানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, একাডেমিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়ম, আর্থিক অসঙ্গতি এবং আইন অমান্যের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে

এই বিশাল সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে এক যুগ আগের আইনটি সংশোধন করে আরও বেশি যুগোপযোগী করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণায় ও ইউজিসির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সম্প্রতি সংশোধিত আইনের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দিয়েছে।

dhakapost
দেশে ১১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের বিষয়ে সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিচালনার স্বার্থে একই পরিবারের তিনজনের বেশি সদস্য ট্রাস্টি বোর্ডে থাকতে পারবেন না। এছাড়া মাঝপথে টিউশন ফি না বাড়ানো, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও মেধাবীদের জন্য বিশেষ কোটা রাখাসহ বেশকিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম রোধ ও শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন, সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কমিটি ও ইউজিসির ক্ষমতা আরও বাড়ানো এবং বিদ্যমান আইনের কঠোর ও দ্রুত প্রয়োগ আবশ্যক— বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ অবদান রাখছে। বর্তমানে তিন লাখ ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পড়ালেখা করছেন। তবে, সেখানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, একাডেমিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়ম, আর্থিক অসঙ্গতি এবং আইন অমান্যের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

এসব বিবেচনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন, সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কমিটি ও ইউজিসির ক্ষমতা আরও বাড়ানো এবং বিদ্যমান আইনের কঠোর ও দ্রুত প্রয়োগ আবশ্যক— বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে এসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর আইনটি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস করানোর জন্য উঠানো হবে। সেখানে সায় মিললে যাবে জাতীয় সংসদে। সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে সংশোধিত আইন হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে।

dhakapost
তিন লাখ ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। তবে, সেখানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

সংশোধিত আইনের খসড়ায় যা আছে-

ট্রাস্টি বোর্ডে এক পরিবারের তিনজনের বেশি নয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের বিষয়ে সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিচালনার স্বার্থে একই পরিবারের তিনজনের বেশি সদস্য ট্রাস্টি বোর্ডে থাকতে পারবেন না।

এছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজে অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। ইউজিসির সুপারিশক্রমে সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কোনোরকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা যাবে না। প্রয়োজনে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ইউজিসি বা সরকার কর্তৃক সাময়িকভাবে একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন করা যাবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বা ভবন শিক্ষা, গবেষণা, সহশিক্ষা ও পাঠ্যক্রমবহির্ভূত শিক্ষা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার মানদণ্ডে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষার্থী ফি কাঠামো তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নেবে এবং সরকারকে তা অবহিত করবে। ফি কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনতে হলে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে

মাঝপথে বাড়ানো যাবে না টিউশন ফি

শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মাঝপথে ফি বাড়ানো যাবে না। কোনো শিক্ষার্থী কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির সময় যে ফি কাঠামোয় ভর্তি হবেন, সে প্রোগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই ফি থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার মানদণ্ডে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষার্থী ফি কাঠামো তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নেবে এবং সরকারকে তা অবহিত করবে। ফি কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনতে হলে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মেধাবীদের থাকবে বিশেষ কোটা

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে শতকরা তিন ভাগ আসন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা তাদের কন্যা/পুত্রের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

এছাড়া শতকরা ছয় ভাগ আসন মেধাবী অথচ দরিদ্র, প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দরিদ্র বা তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের বা দরিদ্র বিধবা মায়ের সন্তানদের বা স্বামী পরিত্যক্তা দরিদ্র মায়ের সন্তানদের ভর্তি সংরক্ষণ করতে হবে।

এসব শিক্ষার্থীকে কোনো ধরনের ফি ছাড়াই সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ দিতে হবে এবং প্রতি শিক্ষাবছর বা সেমিস্টারে অধ্যয়নরত এমন শিক্ষার্থীর তালিকা ইউজিসিতে দাখিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই প্রথম আইন করে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়মুক্ত তহবিলের অঙ্ক বাড়ছে

খসড়া আইনের প্রস্তাবে ঢাকা ও অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য আট কোটি এবং জেলা শহরের জন্য পাঁচ কোটি টাকার তহবিল সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত অবস্থায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

বর্তমান আইনে ঢাকা শহরের জন্য পাঁচ কোটি, অন্যান্য মেট্রোপলিটন সিটির জন্য তিন কোটি এবং জেলা শহরের জন্য দুই কোটি টাকার সংরক্ষিত তহবিল রাখার বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো নামে স্থাপন করা যাবে না, যে নামে এই আইন বা অন্য কোনো আইনের অধীন কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ইতোপূর্বে স্থাপিত হয়ে সে নামে বহাল আছে বা যে নামে আগে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বহাল ছিল কিন্তু বর্তমানে সে নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বহাল নেই বা সে নামের সঙ্গে প্রস্তাবিত নামের সাদৃশ্য আছে।

এছাড়া জেলা, শহর, বিভাগ ও দেশের নাম; জাতীয় বা আন্তর্জাতিক— এ ধরনের কোনো শব্দ ব্যবহার করে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব করা যাবে না।

dhakapost
শিক্ষা মন্ত্রণায় ও ইউজিসির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সম্প্রতি সংশোধিত আইনের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দিয়েছেন 

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যুক্ত হচ্ছেন অ্যালামনাইরা

দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের সংযুক্ত করে আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে তদারকি সংস্থা।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে তাদের অ্যালামনাইদের ভালো ধারণা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের যুক্ত করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম থেকে শুরু করে নানা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবের তারা। সে জন্য প্রস্তাবিত খসড়া আইনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অ্যালামনাইদের যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিটিতে যারা ছিলেন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ সংশোধনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল মতিনকে।

কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন– বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহী আলম, ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ এবং একই বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম।

প্রস্তাবিত আইন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খসড়া আইন প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও সুষ্ঠু ও সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য ২০১০ সালের আইনটি সংশোধন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেক পুরোনো এ আইনের সংশোধন করতে আমরা বেশ কিছু সংশোধনী দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটি চূড়ান্ত হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।

কমিটির সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধনের জন্য ইউজিসির প্রস্তাব পেয়েছি। একটি আইন পরিবর্তনের জন্য বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত নিতে হয়। সেই মতামত নেওয়ার জন্য সভা ডাকা হবে।

আরও খবর: