দেশজুড়ে

উত্তরের অর্থনীতি বদলে দেবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৫ এপ্রিল ২০২৩ , ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে লালমনিরহাট বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি আবারও চালু হবে— এ আশায় অপেক্ষায় আছেন রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান ও নেপালের মানুষ।

বিমানবন্দরটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব, উন্মোচন হবে যোগাযোগের নতুন দ্বার। পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের দৃশ্যপট। তাই এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর দাবি জানান রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, বিমানবন্দরটি চালু হলে নেপাল, ভুটান ও ভারতের অন্তত ১৩টি অঙ্গরাজ্যের মানুষ যেমন অনায়াসে বাংলাদেশে আসতে পারবেন, তেমনি বাংলাদেশিরাও এসব দেশে অল্প খরচে যেতে পারবেন। এছাড়া লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি এলাকায় এক হাজার ১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে। তখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে রেলযোগে বড় বড় পাথর ও অন্যান্য সামগ্রী এনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে রানওয়ে ও অবকাঠামোর নির্মাণকাজ। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এ বিমানঘাঁটি ছিল মিত্রবাহিনীর একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন করে ব্যবহার না হওয়ায় জৌলুস হারাতে থাকে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি। ১৯৫৮ সালে স্বল্প পরিসরে বিমান সার্ভিস চালু হলেও তা বেশিদিন টেকেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়ে সবই এখন পরিত্যক্ত

জানা গেছে, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি এলাকায় এক হাজার ১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে। তখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে রেলযোগে বড় বড় পাথর ও অন্যান্য সামগ্রী এনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে রানওয়ে ও অবকাঠামোর নির্মাণকাজ। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এ বিমানঘাঁটি ছিল মিত্রবাহিনীর একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন করে ব্যবহার না হওয়ায় জৌলুস হারাতে থাকে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি। ১৯৫৮ সালে স্বল্প পরিসরে বিমান সার্ভিস চালু হলেও তা বেশিদিন টেকেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়ে সবই এখন পরিত্যক্ত।

dhakapost
বর্তমানে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের চার কিলোমিটার রানওয়ের চারপাশে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। রানওয়েতে চরানো হচ্ছে গরু-ছাগল

বর্তমানে কৃষি প্রকল্প হিসেবে চার কিলোমিটার রানওয়ের চারপাশে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। রানওয়েতে চরানো হচ্ছে গরু-ছাগল। এসবের কারণে রানওয়েটি নষ্ট হওয়ার পথে। তাই গরু-ছাগল সরিয়ে বিমানবন্দরটি আবারও চালু করার দাবি জানান সচেতন মহল। এছাড়া একাধিকবার স্থানীয়রা বিমানবন্দর চালুর দাবি জানালে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর বিমানবাহিনীর প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। এরপর সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন। কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেন।

২০১৯ সালের ১৩ মার্চ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর বিমানবাহিনীর প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। এরপর সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন। কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেন

কালীগঞ্জ কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রনি ইসলাম, লামিয়া আক্তারসহ অনেকেই বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে উত্তরাঞ্চলে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। একে একে উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে পুরো রংপুর বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছেন। আমাদের বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন। যেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় না চাইতেই তিনি দিয়েছেন। তিনি শত শত নদীর ওপর সেতু দিয়েছেন। পুরো চরাঞ্চলের দৃশ্য পাল্টে গেছে। তাই আশা করছি দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু করবেন তিনি।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি হুমায়ূন কবির মোড়ল বলেন, লালমনিরহাটের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। সড়কে যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা, কখনও তারচেয়েও বেশি। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি যারা পড়াশোনা করতে যান তাদেরও অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। একসময় বিমানবন্দরটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সেরা বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি ঈদে উত্তরাঞ্চলের মানুষ নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে আসেন। বিমানবন্দরটি চালু হলে এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যেত।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আলী হাসান নয়ন বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাতায়াত করতে হলে আগে সৈয়দপুরে যেতে হয়। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিমানবন্দরটি চালু হলে দেশ-বিদেশের পর্যটন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা নতুনভাবে লালমনিরহাটে এসে চিন্তাভাবনা করতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিমানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে বিমানবন্দরটি অচিরেই চালু করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রামে একটি স্থলবন্দর রয়েছে, সোনাহাট স্থলবন্দর। লালমনিরহাটের বিমানবন্দরটি চালু হলে কুড়িগ্রামবাসীরও অনেক সুবিধা হবে।

dhakapost
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ বিমানবাহিনীর প্রধান লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় চালুর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী   

সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এ জেলায় ভুট্টার আবাদ ছাড়াও নানা শাকসবজির চাষ হচ্ছে। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এছাড়া বাইরের যারা বড় ব্যবসায়ী আছেন, তারা এ জেলায় কলকারখানা করার বিষয়ে খুবই আন্তরিক। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এ জেলায় কোনো কলকারখানা গড়ে উঠছে না। লালমনিরহাট থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা এ জেলায় আসতে চান না। তাই দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু করে এ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ করা হোক।

কালীগঞ্জ কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুজ্জামান আহমেদ বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, ভুটান ও নেপালের যাত্রীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন। বর্তমানে বাসে করে তারা ঢাকায় যান। এতে তাদের প্রচণ্ড কষ্ট ও সময় নষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরটি চালু হলে সহজেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা যেতে পারবেন।

বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল বলেন, একসময় ভুটানের সঙ্গে এ বিমানবন্দরের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এখন পরিত্যক্ত থাকার কারণে সেটি আর নেই। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা সময় ও দূরত্ব দুটোই হাতের নাগালে রাখতে চান। বিমানবন্দরটি চালু হলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন। যে কোনো জেলার সঙ্গে যোগাযোগমাধ্যমটা সহজ হলে অঞ্চলটি আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

বেসরকারি সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আটটি বিমানবন্দর চালু আছে। বন্ধ থাকা বিমানবন্দরগুলো চালু হলে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। যদি বিমানবন্দরগুলো চালু হয় তাহলে সব এয়ারলাইনস সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

dhakapost
১৯৭২ সালে লালমনিরহাট বিমানবন্দরকে বিমানবাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেটি আর হয়নি। এখন চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়ে সবই পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, সীমান্তবর্তী এ জেলায় ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে আমার কথা হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের দাবিতে তিনি বিমানবন্দরটি চালু করবেন। এটি চালু হলে মাত্র ৪৫ মিনিটে ঢাকায় যাওয়া যাবে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, বিমানবন্দর চালুর ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্প্রতি তিনি কুড়িগ্রাম সফরে এসেছিলেন। সেখানে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সরকার কবে চালু করবে— এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তবে, দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু এ জেলার মানুষ দাবি জানিয়ে আসছেন নিশ্চয়ই বাস্তবায়ন হবে।

এর আগে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও বিমানবাহিনীর প্রধান বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেছেন। ওই সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেছিলেন, বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।

আরও খবর: