দেশজুড়ে

অকেজো পাম্প, বন্ধ জিকে প্রকল্পের সেচ : বিপাকে কুষ্টিয়াসহ ৪ জেলার বোরো চাষী

  জাগোকন্ঠ ২ মার্চ ২০২৪ , ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ভেড়ামারা প্রতিনিধি: তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটি অচল হয়ে রয়েছে প্রায় দুই বছর ধরে। বাকি পাম্পটি দিয়ে  কোন মতে সেচ কার্যক্রম চলছিল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘সবে ধন নীলমণি’ পাম্পটিও অকেজো হয়ে পড়েছে।
ফলে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) কার্যক্রম। এতে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী চার জেলার লাখখানেক বোরো চাষী। স্বল্প খরচের  সেচ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন চার গুন বেশি খরচ করে স্যালো মেশিনের সাহায্যে কোন মতে ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। কবে থেকে আবার সেচ প্রকল্পের পানি ধানের জমিতে গড়াবে তার  কোন গ্যারান্টি দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।

১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর তীরে স্থাপন করা হয় দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় চার লাখ হেক্টর জমি এ প্রকল্পের আওতায় ছিল। পদ্মা নদীর উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ চালুর পর থেকে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে আসার পর থেকে এই সেচ প্রকল্পের আওতাধীন আবাদি জমির পরিমাণ কমতে থাকে। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় সোয়া লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। ইনটেক চ্যানেলের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি নিয়ে তিনটি পাম্পের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রধান খালে ফেলা হয়। শাখা-উপশাখা খালের মাধ্যমে সে পানি চলে যায় কৃষকের খেতে। ২০২২ সালে প্রকল্পের দুটি পাম্প অকেজো হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা জটিলতায় ওই পাম্প দুটো আর চালু হয়নি। বাকি পাম্পটি দিয়ে কোন মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল এ প্রকল্পের কার্যক্রম। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওই পাম্পের সাহায্যে খালে সেচের পানি সরবরাহ শুরু হয়। তবে গত ১৪ ফেব্র“য়ারি অচল হয়ে যায় শেষ সম্বল ওই পাম্পটিও। ফলে গত দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ সেচের পানি সরবরাহের কাজ। এতে চরম বিপাকে পড়েছে ৪ জেলার লাখখানেক কৃষক তথা বোরো চাষী। জিকে প্রকল্পের পানিতে নামমাত্র মূল্যে কৃষকরা ধানের আবাদ করে থাকে। তবে এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই প্রকল্পের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকদের কপালে। এরই মধ্যে অনেক জমিতে বোরোর চারা রোপণ করা হলেও এখনো বেশ কিছু জমিতে রোপন বাকি রয়েছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে স্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে তাদের অনেক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। আবার অনেকে পানির অভাবে এখনো চারা রোপণ করতে পারেননি বীজতলায় নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা। কুষ্টিয়া সদরের ভাদালিয়া এলাকার কৃষক আবের আলী জানান, বোরো, আমন, আউশ-এই তিনটি  মৌসুমে তিনি জিকে প্রকল্পের আওতায় জমিতে ধান চাষ করেন। জিকের পানিতে নামমাত্র সেচ খরচের মাধ্যমে তিনি এতদিন ধান আবাদ করে এসেছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রকল্পের পানি না পাওয়ায় এবার তাকে স্যালো মেশিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে অনেক পয়সা গুনতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষক হাসেম আলী বলেন, এবার বোরো ধান চাষ করা তাদের জন্য মুশকিল হয়ে পড়বে। চড়া মূল্যে ডিজেল কিনে ধানের জমিতে সেচ দেওয়া খুব ব্যয়বহুল হবে। তিনি বলেন, তার মত ওই এলাকায় হাজার হাজার বোরো চাষী এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে জিকে প্রকল্পের পাম্প সচল করে সেচ কার্যক্রম চালুর দাবি জানান। এদিকে পাম্পগুলো কবে নাগাদ সচল করা সম্ভব হবে তাও বলতে পারছে না জিকে কর্তৃপক্ষ। জিকে পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে প্রকল্পের একমাত্র চালু পাম্পটিও অচল হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তারাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত  রেখেছেন। তারা দেশি অথবা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পাম্পগুলো ঠিক করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কবে নাগাদ পাম্পগুলো ফের চালু করা যাবে তা বলতে পারেননি মিজানুর রহমান।

আরও খবর: