দেশজুড়ে

ময়মনসিংহে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার দুই আসামি গ্রেপ্তার

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ২৬ জুন ২০২৩ , ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই আসামি মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম (৬৫) ও মাহাবুব আলম মণ্ডলকে (৭০) ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রোববার (২৫ জুন) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।

পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও ফুলপুর উপজেলার মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুটি মামলায় দুই রাজাকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমকে (৬৫) ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপুতা গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এবারের ঈদে স্থানীয় এক আত্মীয় বাড়িতে ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ আরও জানায়, ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহম্মদের নির্দেশে আলবদর আবুল হাসেম ১৫ থেকে ১৬ জন রাজাকার নিয়ে সোহাগী বাজারে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহশিলদার, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সোহাগী মাদরাসার হিসাবরক্ষক কাঠালিয়া গ্রামের মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেন ও তাকে গুম করে ময়মনসিংহ শহরে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদে ফেলে দেন। এছাড়া অভিযুক্ত রাজাকাররা আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র করকে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পাকিস্তানি ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার পর মরদেহ গুম করে ফেলে।

অপরদিকে জেলার ফুলপুর উপজেলায় ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলার ১৩ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার পলাতক আসামি মাহাবুব আলম মণ্ডলকে (৭০) গ্রেপ্তার করেছে ফুলপুর থানা পুলিশ। ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকা থেকে রোববার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়।

মাহাবুব মণ্ডল জেলার ফুলপুর উপজেলার পাশ্চিম বাখাই গ্রামের মৃত বসির উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। ২০০৯ সালে মামলা হওয়ার পর অন্তত ১৪ বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা মাহাবুব মন্ডল ঈদ উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহে আসেন। পুলিশ খবর পেয়ে তার মেয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

মাহাবুবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ রয়েছে তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গঠিত স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তার বিরুদ্ধে মামলার বাদী পরিমল চন্দ্র দাসের বাবা যোগেশ চন্দ্র দাস ও তার অন্যান্য আত্মীয়সহ মোট নয়জনকে টেনেহিঁচড়ে কংস নদীর পাড়ে নিয়ে রাইফেল ও স্টেনগান দিয়ে নির্বিচারে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যার অভিযোগ করেন।

এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন মাহাবুব মণ্ডল পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করতেন। এলাকায় ত্রাস কায়েম করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের ওপর অমানুষিক নিযার্তন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দেন এবং বাড়িতে থাকা সম্পদ লুণ্ঠন, নারী ধর্ষণ ও হত্যাসহ জঘন্য অপরাধ চালিয়ে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি হিন্দু সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষের জমিজামা আত্মসাৎ করে তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।

আসামি মাহাবুব ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিএনপির ফুলপুর সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং ২০১২ থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত ফুলপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির হিসেবে মনোনীত ছিলেন এবং গোপনে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন।

জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, দুই আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে হস্তান্তর করা হবে।

আরও খবর: