মা-বাবা উভয়ের ভালোবাসার ফসল মানবশিশু। সন্তানকে গর্ভে ধরেন মা। এরপর মা-বাবা দুজনে মিলেই তিল তিল করে বড় করে তোলেন শিশুকে। সন্তানের শারীরিক-মানসিক বেড়ে ওঠার এই যাত্রায় সাধারণত মায়ের সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠ আর খোলামেলা সম্পর্ক হয়, বাবার সঙ্গে ততটা হয় না।
স্নেহ বা দায়িত্ব পালনে কমতি না থাকলেও বাবা যেন একটু হলেও দূরের মানুষ হয়ে থাকেন। মা হয়তো প্রকৃতিগত কারণেই মূলত নরম-কোমল, সেখানে বাবা অনেক সময়ই আদরে-শাসনে কিছুটা কঠিন। একটা সময় তাই বাবাকে সরাসরি ভালোবাসার কথা বলতেও বাধা দেয় জড়তা। বাবা দিবসের বিশেষত্ব হলো, এই দিনে সব জড়তা ছুড়ে ফেলে তাঁকেও ভালোবাসার কথা বলা যায় অনায়াসে।
স্বীকৃতি দেওয়া যায় অফুরান স্নেহ আর দায়িত্ববোধের কিছুটা অলক্ষে থেকে যাওয়া উৎসটিকেও।
জন্মদাতা পিতা যেন বটবৃক্ষ। তাঁর ছায়া পরম নির্ভরতার প্রতীক। বিপদে-আপদে তো বটেই, সব সময়ই সন্তানের ওপর ভরসার ছাতা মেলে রাখেন বাবা।
জন্মের পর থেকে আমৃত্যু সন্তানকে ভালোবাসায় বেঁধে রাখেন মা-বাবা। অনেকেই বলেন, এ ভালোবাসার স্বীকৃতির জন্য আলাদা কোনো দিন-ক্ষণের প্রয়োজন নেই। সে জন্য মা, বাবা ইত্যাদি দিবস পালনের কিছু সমালোচনাও আছে। তবে সময়ের পরিবর্তনে পিতা-মাতার অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিশেষ দিনগুলো গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।
মা দিবস উদযাপনের কিছুদিন পরই পালিত হয়ে থাকে বাবা দিবস। ইউরোপের ক্যাথলিক খ্রিস্টান দেশগুলোতে অতীতে চালু হয়েছিল এটি। মধ্যযুগ থেকে ১৯ মার্চ সেন্ট জোসেফ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল এ দিন। তবে আধুনিক কালে, বিংশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবস চালু করেন সোনোরা স্মার্ট ডড। ১৯১০ সালে প্রথমবারের মতো জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হয় কয়েকটি ভিন্ন তারিখে। বিভিন্ন অঞ্চলে আছে বাবাকে সম্মান জানানোর নিজস্ব ঐতিহ্যও। কোনো কোনো দেশে এটি ছুটির দিন।
বাংলাদেশে মা, শিক্ষক বা ভালোবাসা—ইত্যাদি হরেক দিবসের মতোই বাবা দিবসও বেশ সাম্প্রতিক ঘটনা। বিশ্বায়নের হাত ধরে একেকটি দিবস ‘বিশ্বগ্রামের’ অংশ এ দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। বাবা দিবসে আজ অনেকেই বাবাকে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানাবে। কেউ কেউ হয়তো দেবে উপহারও। দিবসটি উপলক্ষে অনেক ফ্যাশন হাউস বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে। অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় থাকে বিশেষ আয়োজন। বেশ একটা উৎসবের ছোঁয়া থাকে এসবে।হাল আমলে নিজের অনুভূতি, ভালো লাগা, ভালোবাসার কথা জানানোর অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ছোট-বড় লেখা আর ছবিতে সেখানেও থাকবে বাবা দিবসের উপস্থিতি। বাবার সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধন বা অম্লমধুর স্মৃতির নানা বিবরণ মিলবে এসব ছবি আর লেখায়। কেউ কেউ হয়তো দূরে থাকা বাবাকে ফোন করে ভালোবাসার কথা বলবে। তাতে সজল হবে পিতার চোখ। যাদের বাবা বেঁচে নেই, তারাও বাবার কথা স্মরণ করবে এদিন। থাকবে বাবাদের জন্য প্রার্থনার পালাও।