দেশজুড়ে

প্রায় ২০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে ঠাকুরগাঁওয়ের আমগাছটি

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৫ জুন ২০২৩ , ৩:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় আড়াই বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত আশ্চর্য এক আমগাছ। বিশালাকৃতির এই গাছটিকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়তই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক একনজর এই আম গাছটিকে দেখার জন্য ভিড় করে।

পুরনো এই সূর্যপুরী আমগাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে। এই আমগাছটি পুরো জেলায় এক বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো গাছ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে একেবারে দেখা বলতে গেলে অসম্ভব। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত চিন্তায় পড়ে যেতে হয়।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আম সূর্যপুরী। এর চাহিদা রয়েছে পুরো দেশজুড়ে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি এই আমের জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বালিয়াডাঙ্গীর বিশালাকৃতির আমগাছটি ৮২ শতাংশ জমির উপরে বিস্তৃত।

গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট, এর পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডাল নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। এখন আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২৫০ গ্রাম থেকে ২৭০ গ্রাম। এবারও গাছটিতে ব্যাপক পরিমাণে আম ধরেছে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠাকুরগাঁয়ের এই আমগাছটি। ছটির বয়স কত তা ঠিক করে বলতে পাড়ছেন না কেও। তবে এলাকার বেশির ভাগ মানুষ এক মত যে প্রায় ২০০ বছরের কম নয়।

dhakapost

রংপুর থেকে বালিয়াডাঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী আমগাছটি দেখতে আসা জেনিসন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক দিন ধরেই দেখছি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গীতে অবস্থিত। তাই আজ স্বচোখে দেখার জন্যই এখানে আসা। আমার জানা মতে শুধু এশিয়া মহাদেশের মধ্যে নয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড়আম গাছ এটি। সত্যিই আমগাছটি নিজ চোখে না দেখলে এর বিশালতা বোঝার উপায় নেই।

মানিকুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামে আমার বাসা আমি প্রতিদিনই দেখি এখানে ৫০০ থেকে ৬০০ পর্যটক এই সূর্যপুরী আম গাছটি দেখতে আসে। বিভিন্ন জেলার মানুষ আসে এই আমগাছটি দেখতে এবং কি দেশের বাইরে থেকেও আসে।

উত্তরাধিকার সূত্রে বালিয়াডাঙ্গী সূর্যপূরী আমগাছটির বর্তমান মালিক নূর ইসলাম। নুর ইসলামের বাবার দাদা গাছটি লাগিয়েছিলেন। নুর ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতি বছর গাছটিতে প্রচুর আম হয়। ৮২ শতক জমি জুড়ে এটি বিস্তৃত। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক এসে ভিড় করে। গত বছর প্রায় ৪০ মণেরও বেশি আম বিক্রি করা হয়েছিল। এবারও প্রচুর আম ধরেছে, আশা করি এবার ৪০ থেকে ৫০ মণের বেশি আম হবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, এবারে এই সূর্যপুরী আম গাছটির আম আমি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছি। আমি তখন থেকে দেখতেছি বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এই আম গাছটি দেখতে আসে। এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচুর পরিমাণে সূর্যপুরী আম বাগান রয়েছে। এমন সুস্বাদু আম দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকায় অল্প মূল্যে কিনতে পারে ক্রেতারা। আর আম প্রিয় মানুষের কাছে এই আমের কদরও অনেক বেশি।

বালিয়াডাঙ্গা উপজেলার গুরিয়ালি গ্রামের আম বাগান মালিক আনসার আলী বলেন, আমি মিথ্যা মামলায় কারাগারে ছিলাম ওই সময় দুর্বৃত্ত আমার বারোটি আম গান আগুন ধরে জ্বালিয়ে দেয়। তখন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার বারোটা আম গাছ পুড়িয়েছে তো কি আমি ১২শ গাছ লাগাব। এখন আমি গাছ লাগাতে লাগাতে ৫২ বিঘা জমিতে ৩ হাজারেরও অধিক আম গাছ লাগিয়েছি। আল্লাহ দিলে এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। আমার এই বাগানে সূর্যপুরী আমসহ বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। কুরবানীর ঈদের পরে আমার বাগানের আম পাড়তে শুরু করব। আমার বাগানের আম ফেনী, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুব আলম  বলেন, এই গাছটির শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব না এই গাছটি সারাদেশের গর্ব। পর্যটকদের জন্য আমরা বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছি। গিনেস বোর্ডে ইতোমধ্যে আমরা আবেদন করেছি। গিনেস রেকর্ডে নাম লেখানো যায় কিনা সেজন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

আরও খবর: