দেশজুড়ে

চট্টগ্রামে সুপেয় পানির তীব্র সংকট, বাড়ছে ডায়রিয়া

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৭ মে ২০২৩ , ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে পানির সংকট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরে রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। তবে পরিশোধিত পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণের কারণে সেটি খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার জেলার বিভিন্ন এলাকার নলকূপেও পানি উঠছে না।

দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সবমিলিয়ে নগর এবং বিভিন্ন উপজেলায় পানির জন্য এক ধরনের হাহাকার তৈরি হয়েছে। সুপেয় পানির সমস্যায় জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানির স্তর নেমে গেছে। এ কারণে কর্ণফুলী নদীতে পানি প্রবাহের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে জোয়ারের সময় বঙ্গোপোসাগর থেকে নদীতে ঢুকছে লবণাক্ত পানি। কর্ণফুলী হয়ে সেই পানি ঢুকছে হালদায়। এতে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধনাগার কেন্দ্রের পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ শুক্রবার পানি সংগ্রহের উৎসস্থলের একটিতে প্রতি লিটারে লবণের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার মিলিগ্রাম এবং আরেকটিতে ছিল আড়াই হাজার মিলিগ্রাম।

dhakapost

চট্টগ্রাম নগরে দিনে ৪৬ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) উৎপাদিত হয়েছে ৩৯ কোটি লিটার। প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৭ কোটি লিটার কম। প্রতিদিনই এ ঘাটতি হচ্ছে। তাই এলাকাভিত্তিক রেশনিং করে পানি সাপ্লাই দিচ্ছে ওয়াসা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম  বলেন, পানি উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে রেশনিং পদ্ধতিতে পানি দেওয়া হচ্ছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি কম আসায় পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ কারণে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সরবরাহ করা পানিতে প্রতি লিটারে ৪০০ মিলিগ্রামের কম লবণের মাত্রা রয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এর কোনো সমাধান নেই। এই সময়ে পানি সরবরাহও কম থাকবে, একইসঙ্গে সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততাও থাকবে। কিছু করার নেই।

dhakapost

এদিকে, বৃষ্টি না হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানি খাচ্ছেন। এভাবে পানি পানের কারণে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।

শনিবার (৬ মে) জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩২ জন। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে ১৫, সীতাকুণ্ডে ১৪, ফটিকছড়িতে ১৪, হাটহাজারীতে ৮, রাউজানে ১১, রাঙ্গুনিয়ায় ১০, বোয়ালখালীতে ২৩, আনোয়ারায় ২৯, পটিয়ায় ৩০, বাঁশখালীতে ১৬, চন্দনাইশে ৩৩, সাতকানিয়ায় ১২ এবং লোহাগাড়ায় ১৬ জন আক্রান্ত হয়। একই সময়ের মধ্যে আরও ২৩৪ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তার মানে প্রায় প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ডায়রিয়ার প্রকোপরোধে এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরী অভিকে সভাপতি, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসিকে সদস্য সচিব এবং সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ডায়রিয়ার কারণ, বর্তমান ব্যবস্থাপনা, প্রতিরোধের উপায় এবং সুপারিশ ইত্যাদি উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ডায়রিয়ার প্রকোপরোধে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করা, রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলে সিভিল সার্জন অফিস এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবহিত করা, রোগের স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী শনিবার দুপুরে বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় নরমাল টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, গভীর নলকূপেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ কমে গেছে। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। আবার কোনো কোনো এলাকার পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি। এ কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়ার প্রকোপের আরেকটি কারণ হতে পারে বাইরের খাবার গ্রহণ। পয়লা বৈশাখ ও ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে মানুষ বেড়াতে বের হয়েছে। এ সময় তারা বাইরের খাবার খেয়েছে। বাইরের খাবার শরীরের জন্য নিরাপদ নয়। যাই হোক, আমরা ডায়রিয়া মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলার সব কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

আরও খবর: