দেশজুড়ে

প্রতিদিন বাড়ছে ফরিদপুরের তাপমাত্রা, গরমে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশের মত ফরিদপুরেও বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনের তাপমাত্রার রেকর্ড। প্রচণ্ড দাবদাহে বাধ্য হয়ে বাইরে কাজে বের হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। 

ফরিদপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরেই জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সর্বশেষ শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

শনিবার শহরের বিভিন্ন মহল্লা ও সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, খুব জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে। জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছে ডাব বিক্রেতা, রিকশাচালক। তবে অনেক ডাব বিক্রেতা বিভিন্ন ভবনের ছায়ায় ডাব বিক্রি করছেন। আবার রোদ এলে সেখান থেকে সরে অন্যত্র ডাব বিক্রির জন্য যাচ্ছেন। কিছু রিকশাচালক মাথার উপর ছাতা বেঁধে রিকশা চালাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগই মাথায় রোদ নিয়েই যাত্রীদের তার গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।

শহরের নীলটুলি মহল্লায় অবস্থিত মুজিব সড়কের পাশে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা আবুল কাশেম মোল্লার (৪২) সঙ্গে। ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাঁচ শতাংশে একটি সেমিপাকা ঘরে বসবাস তার। প্রতিদিন সেখান থেকে ডাব নিয়ে শহরে আসেন বিক্রির জন্য। তিনি বলেন, রোজায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে ডাব বিক্রি বেড়েছে। অনেকে ডাব কিনে বাসায় নিয়ে কেটে খায়। আবার কেউ কেউ ইফতারে ডাবের পানি খাওয়ার জন্য বোতলে করে পানি নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিদিন তার ৬০ থেকে ৮০ পিস ডাব বিক্রি হয়। আকারভেদে এসব ডাব ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তিনি।

মাথায় ছাতা ফুটিয়ে মুজিব সড়ক ধরে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন হাসেম সরদার। তার বাড়ি নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী এলাকায়। তবে তিনি ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুরে একটি মেসে থেকে রিকশা চালান। হাসেম বলেন, এই গরমে মাথার উপর কায়দা কইরা ছাতি লাগাইছি। চারদিন হয় ছাতি লাগাইছি। রোজা থাইকা এত গরম সহ্য করা যায় না।

তিনি বলেন, এই গরমে সকালে ও ইফতারের পর যাত্রী বেশি হয়। তবে অন্যান্য সময় টুকটাক যাত্রী পাওয়া যায়। গরম কবে যাবে তা কেডা জানে।

ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিদিন বেলা ৩টার সময় আমরা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করছি। এতে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে আগেরদিনের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তীব্র গরমে শিশুদের জ্বর ঠাণ্ডা ও ডায়রিয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিক পর্যায়ের।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর বেশিরভাগই ৯ মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশু। গত চার দিনে (১২ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল) এই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৬ জন রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৭ জন। বাকি ৯ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক হার বলে জানান তিনি।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা গনেশ কুমার আগারওয়ালা বলেন, এই তীব্র রোদ ও গরমে বাইরে যত কম বের হওয়া যাবে ততই মঙ্গল। পাশাপাশি ডাবের পানি, স্যালাইন খেতে পারলে ভালো। তবে পানি বেশি বেশি পান করতে হবে। একান্ত জরুরি কাজে বাইরে বের হলে ছাতা, রুমাল, সানগ্লাস নিয়ে বের হতে হবে যাতে রোদ কম লাগে। যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পোশাক পরা উত্তম।

আরও খবর: