ময়মনসিংহ

ধর্মের সঙ্গে ‍‍‍‍‍‍‍সংস্কৃতির কোনো বিরোধ নেই- সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

  জাগোকন্ঠ ১৪ এপ্রিল ২০২৩ , ২:১৯ অপরাহ্ণ

ফেরদৌস ওনু

কে এম খালিদ এমপি সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ধর্ম এবং সংস্কৃতি দুটোই স্বতন্ত্র বিষয় ।  একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো বিরোধ নেই। আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতি থেকে সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করি, শিক্ষা নিয়ে বড়ো হই অন্যদিকে, সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে তার নিয়ম পালন করে থাকি । একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

প্রতিমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দশ দিনব্যাপী (১১-২০ এপ্রিল) ‘বৈশাখী মেলা ১৪৩০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে   অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি।

প্রধান অতিথি বলেন,  বৈশাখী মেলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। নতুন বছরে মানুষের আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ ঘটে বৈশাখী মেলার মাধ্যমে। এ মেলা উপলক্ষ্যে মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, নানা জাতের কুটির শিল্প, কারুশিল্প, খেলনাসহ হরেক রকমের পণ্যের সমাহার ঘটে এ মেলায়। এছাড়াও থাকে যাত্রা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাসসহ বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন। নতুনকে বরণ করার উদ্দেশ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে বৈশাখী মেলা একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। এতে মানুষের মাঝে প্রগতিশীল চেতনা জেগে ওঠে।

পহেলা বৈশাখকে প্রতিহত করার জন্য কিছু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নানাভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে বর্তমান সরকারের তৎপরতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন পহেলা বৈশাখের দু’টি প্রেক্ষাপট অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। সম্রাট আকবরের সময় কৃষি জমির খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা নববর্ষ চালু হয়। ধীরে ধীরে এটি সর্বজনীন রূপ লাভ করে। কে এম খালিদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে কিছু ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পহেলা বৈশাখের বিরোধিতা করেছিলো। পাকিস্তান সরকারের আমলে একবার পহেলা বৈশাখ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সেই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা একটি গোষ্ঠী আবারও পহেলা বৈশাখের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। পহেলা বৈশাখের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা যেটি ইতোমধ্যে ইউনেস্কো’র বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সেটিকে নিষিদ্ধকরণের জন্য একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বিসিকের চেয়ারম্যান মুহ: মাহবুবুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির যাপিত জীবনের অনন্য দিন। হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলাসহ নানা আয়োজনে আমরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে থাকি। এর সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি সুবিশাল। এটি গ্রাম থেকে শুরু হলেও বর্তমানে এটি নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। মোঃ আবুল মনসুর বলেন, বৈশাখী মেলা বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের ভগ্নাংশ। ১৫০-৬০০ বছরের পুরনো এ মেলা। এ মেলাকে ঘিরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নানা লোকজ উৎসব আবর্তিত হয়। সচিব সংস্কৃতির অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসাবে বৈশাখী মেলা টিকে থাকুক অনন্তকাল- এ কামনা করেন।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে বিসিকের উদ্যোগে দেশের কারুশিল্পীদের মধ্যে তাঁদের কাজের দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরুপ কারুশিল্পী পুরস্কার-১৪২৯ প্রদান করা হয় যার মধ্যে ১ জন শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীকে কারুরত্ন এবং ০৯ জন দক্ষ কারুশিল্পীকে কারুগৌরব পুরস্কার প্রদান করা হয়। মেলায় মোট স্টল থাকছে ৮৮ টি যার মধ্যে চামড়াজাত ও পাটজাত পণ্য-১৩টি, ফ্যাশন/বুটিকস পণ্য-৪৮টি, খাদ্যজাত পণ্য-১০টি, বাঁশ, বেত ও হস্তশিল্প-৫টি, বিসিক মধু-২টি, কর্মরত কারুশিল্পী-১০টি।

আরও খবর: