অর্থনীতি

ক্রেতা কম, জমেনি যাকাতের কাপড় বিক্রি

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১৩ এপ্রিল ২০২৩ , ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের রমজান মাসে যাকাতের কাপড় বিক্রি কমেছে কয়েক গুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাকালের আগে রমজান মাসে যাকাতের কাপড়ে যে ব্যবসা হতো এখন সেই তুলনায় বিক্রি অনেক কমেছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, এখন মানুষ আর আগের মতো যাকাতে শাড়ি-লুঙ্গি না দিয়ে নগদ টাকা দেয়। সেই কারণে রমজান অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও সেই তুলনায় ক্রেতা সমাগম নেই।

পবিত্র এ রমজান মাসে অধিকাংশ মুসলিম ধর্মালম্বী যাকাত দেয় ফলে ব্যবসায়ীরা এই সময়ে যাকাতের কাপড় বিক্রির প্রস্তুতি রাখে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যাকাতের কাপড় সাজিয়ে রাখলেও এখন পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা কম। তবে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, দুই-একদিনের মধ্যে হয়তো ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।

যাকাতের কাপড় মার্কেট এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার যাকাতের সব ধরনের কাপড়ের দাম ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সকল ধরনের রং, কেমিক্যাল সুতাসহ সবকিছুর দাম বাড়তি এছাড়া ডলার পরিস্থিতি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এসব কাপড়ের উপরে পড়েছে। যাকাতের কাপড় ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে যা গত বছর প্রায় ৫০ টাকা কম ছিল। অন্যদিকে যাকাতের লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।

রাজধানীর মতিঝিলের কাপড়ের দোকান কনক হাউজ। ৫২ বছরের পুরনো দোকান এটি। দীর্ঘদিন ধরে যাকাতের কাপড় বিক্রিতে সুনাম ধরে রেখে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এবার দোকান মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এখনও যাকাতের কাপড় বিক্রি জমেনি।

কনক হাউজের মালিক সরোওয়ার হোসেন বলেন, এবার ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। অর্ধেকের বেশি রোজা চলে গেলেও এখনও সেভাবে যাকাতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়নি। এবার মনে হয় ব্যবসা খারাপ যাবে। আগে মানুষ যাকাতে যেভাবে শাড়ি-লুঙ্গি দিত এখন সেখানে মানুষ নগদ টাকা দেয়। ফলে বিক্রি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

তিনি বলেন, এছাড়া এবার সকল ধরনের রং, কেমিক্যাল সুতাসহ সবকিছুর দাম বাড়তি যাচ্ছে। এছাড়া ডলার পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এবার শাড়ি-লুঙ্গির দাম ২ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যান্যবার রমজানের এই সময় আমাদের বিক্রি জমজমাট থাকে। কিন্তু এবার সেই হিসেবে এখনও জমেনি। তবে আশা করছি দুই-তিনদিনের মধ্যে বিক্রি বাড়বে।

আপনার দোকানে যাকাতের কাপড়ের দাম কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় যাকাতের কাপড়ের দাম এবার কিছুটা বাড়তি। এবার আমরা শাড়ি বিক্রি করছি সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকায়। এটি মূলত ছাপা প্রিন্টের শাড়ি। এছাড়া যাকাতের কাপড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা দামের শাড়ি আছে। বাহারি লুঙ্গির পিস বিক্রি করছি সর্বনিম্ন ২৫০ টাকায়। এছাড়া আরেকটু ভালো মানের ৩৫০ টাকা দামের লুঙ্গিও পাওয়া যাচ্ছে।

এসময় কনক হাউজে যাকাতের কাপড়ের দরদাম করছিলেন নাজিরাবাজার এলাকার জমশেদ আলী। তিনি বলেন, এবার যাকাতের কাপড় কিনতে এসে দেখলাম সব ধরনের শাড়ি-লুঙ্গির দাম বেড়ে গেছে। ছাপা প্রিন্ট শাড়ি আগে ৩০০ টাকা করে কিনলেও এবার ৩৫০/৩৬০ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাহারি লুঙ্গির দামও বেশি।

গুলিস্তানের আরেক যাকাতের কাপড়ের দোকানের ম্যানেজার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছর করোনা থাকায় সেসময়ে মূলত যাকাতের কাপড়ের ব্যবসার উপর খারাপ প্রভাব পড়েছে। তখন থেকেই যাকাত হিসেবে মানুষ দরিদ্রদের নগদ টাকা দিতে শুরু করে। এর ফলে এই ব্যবসাটা অনেক খারাপের দিকে চলে এসেছে। এখন আর আগের দিনের মতো যাকাতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে না। আগে ১০ রোজা থেকে ভরপুর বিক্রি শুরু হলেও এবার সে অনুযায়ী জমেনি।