দেশজুড়ে

ডাহুক নদী গিলে খাচ্ছে পাথরখেকোরা

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৫:০১ অপরাহ্ণ

পাথরখেকোদের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পঞ্চগড়ের ডাহুক নদী। ড্রেজার মেশিনের পর অভিনব কৌশলে এখন ট্রাক্টর দিয়ে চলছে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। কিছু অসাধু ব্যক্তি নদীর গতি বন্ধ করে দিন-রাতে তুলছেন পাথর। প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে নদীর বুক। হারিয়ে যাচ্ছে নদীর চিরচেনা রূপ। বৈচিত্রের সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বন্ধ হয়ে গেছে নদীর গতিপথ। 

কয়েক বছর আগে এই ডাহুক নদীর বুক চিরে পাথর তুলতে চালানো হতো অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিন। এসব মেশিনে মাটির ২০০-২৫০ ফুট গভীর থেকে পাথর উত্তোলনে নদীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। গর্তে ক্ষতবিক্ষত নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার রূপ-বৈচিত্র্য। এভাবে পাথর উত্তোলন করলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কার বার্তা দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা। তবুও থামছে না পাথর উত্তোলন। এখন ড্রেজার মেশিনের পরিবর্তে নদীতে অভিনব পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চলছে পাথর উত্তোলন।

জানা যায়, উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, লোহাকাচী, বালাবাড়ি, কালিতলাসহ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বালাবাড়ি, কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদিঘী এলাকায় ডাহুক নদীতে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এতে নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ডাহুক নদী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীতে প্রায় ১০০ সাইট রয়েছে। এসব সাইট থেকে রাতের আঁধারে উত্তোলন করা হচ্ছে শত শত টন পাথর। ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করার ফলে কর্মহীন হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। একটি ট্রাক্টর কমপক্ষে ২০ জনের কাজ করতে পারে। পাথর উত্তোলনের কাজের সঙ্গে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধি জড়িত। তার নেতৃত্বে এসব সাইট পরিচালনা করছেন ২০ থেকে ২৫ জন যুবক।

রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিনসহ কয়েকজন পাথর শ্রমিক বলেন, আমরা ডাহুক নদীতে ডুবে পাথর উত্তোলন করতাম। এতে এক গর্তে কমপক্ষে ৩০-৪০ জন মানুষের প্রয়োজন হতো। এখন ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করার কারণে মানুষের প্রয়োজন হয় ৮-১০ জনের। এতে আমরা পাথর শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছি। প্রশাসনের কাছে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবি জানাই।

dhakapost

শালবাহান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাঝখানে কয়েক দিন ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলা হয়েছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিদের্শনায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কালিতলা ব্রিজ ও ডাহুক ব্রিজের ধারে যেসব ক্ষতি হয়েছে তার কারণে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবারও তিনজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে।

ডাহুক নদীতে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি জড়িত- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অসম্ভব। এসব করার সময় কই। ইউনিয়নের জনগণের সেবা করতেই সময় পাওয়া যায় না। কিছু প্রতিপক্ষ রয়েছে, তারাই এসব বলে বেড়াচ্ছে। নদীতে ড্রেজার কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বারবার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতিতে নদী থেকে পাথর তুলতে বাধা নেই। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করছি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ট্রাক্টর জব্দসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখন ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে। ট্রাক্টর দিয়ে যাতে পাথর তোলা না হয় সেজন্য পুলিশ সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। যাতে কোনোভাবেই কালিতলা থেকে ডাহুক নদী পর্যন্ত কেউ এ ধরনের ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তুলতে না পারে সেক্ষেত্রে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বুধবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডাহুক নদীতে অভিযান পরিচালনা করে তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, কিছু দিন ধরে ডাহুক নদীতে নতুন পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। আমি এ নিয়ে যারা পাথর তোলেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউএনও ও থানার ওসির সঙ্গেও কথা বলেছি। কী কারণে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।

আরও খবর: