দেশজুড়ে

শিক্ষকদের ‘বেয়াদব’ বললেন কালচারাল অফিসার !! ক্লাস বর্জন শিল্পকলার শিক্ষকদের

  জাগোকন্ঠ ৭ মার্চ ২০২৪ , ৮:০৮ অপরাহ্ণ

ফরহাদ খান, নড়াইল প্রতিনিধি:

নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, হামিদুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায় ?

এদিকে, কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান শিল্পকলার শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগে ক্লাস বর্জন করেছেন তারা। গত সোমবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান চারজন সিনিয়র শিক্ষকের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। এ কারণে কালচালার অফিসারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত শিল্পকলার সব শিক্ষক (নয়জন) গতকাল মঙ্গলবার থেকে ক্লাস বর্জন অব্যাহত রেখেছেন।

শিল্পকলার সংগীত বিভাগের শিক্ষক নিরঞ্জন বিশ^াস, আশিষ কুমার স্বপন ও মুকুল রায় জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান তাদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন ! শিক্ষকরা আপত্তি জানালে তাদের ‘বেয়াদব’ বলে গালি দেন তিনি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, কালচারাল অফিসার এখানকার শিক্ষক, কণ্ঠ ও নৃত্যশিল্পী এবং যন্ত্রবাদকদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করালেও তাদের নির্ধারিত সম্মানি দেন না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী একযোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সংগীত দল, নৃত্যদল ও প্রশিক্ষণার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পিঠা ও লোকসংস্কৃতি উৎসবে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও শিল্পী ও কলাকুশলীদের কোনো সম্মানি দেয়া হয়নি। এভাবে প্রায় ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এর আগে আরো ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে স্বাক্ষ্য দেন জেলার ৩২জন সাংস্কৃতিক কর্মী ও ভুক্তভোগী অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। একাধিক ভুয়া বিল দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এম এম আরাফাত হোসেনের কাছে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেন তারা।

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দসহ ভুক্তভোগীরা জানান, কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরাফাত হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

হামিদুর রহমানের আর্থিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি তার (হামিদুর রহমান) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। তবে এতো দিনেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সঙ্গতকারণে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, হামিদুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায় ? ফলে দাপটের সঙ্গে হামিদুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান নড়াইলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ধ্বংস করে শিক্ষকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপমান করে যাচ্ছেন। তিনি যোগদানের পর থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার দুর্নীতি করেছেন। হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আজ বুধবার (৬ মার্চ) নড়াইলবাসী জরুরি সভার ডাক দিয়েছেন। এ সভা থেকে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

এদিকে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্বব্যহার এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে ময়মনসিংহ জেলা কালচারাল অফিসার হিসেবে কর্মকত থাকা অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির কারণে হামিদুর রহমানকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় বদলি করা হয়। এ নিয়ে ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর গত বছরের (২০২৩) জানুয়ারিতে জেলা কালচারাল অফিসার হিসেবে নড়াইলে যোগদান করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মহোদয়ের কাছে গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

আরও খবর: