দেশজুড়ে

উদ্বোধনের পরও সেবার দরজা বন্ধ

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১১ এপ্রিল ২০২৩ , ২:৩৯ অপরাহ্ণ

বহুল কাঙ্ক্ষিত ১০০ শয্যার বিশেষায়িত রংপুর শিশু হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় অনিশ্চিত প্রহর গুনছে রংপুরবাসী। ইতোমধ্যে হাসপাতালটি নির্মাণের ৩৬ মাস পেরিয়েছে। আর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কেটে গেছে দুই মাস। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিতা কেটে হাসপাতালের দ্বার উন্মুক্ত করলেও এখনো সেবার দ্বার খোলা হয়নি। এতে করে এ অঞ্চলের শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর শিশু হাসপাতাল ভবনে নির্জন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আবাসিক চিকিৎসক, চারজন নার্স এবং নিরাপত্তা প্রহরীরা কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছেন। চত্বরে শিশুদের জন্য নির্মিত বিভিন্ন খেলার রাইডগুলো ধুলোবালিতে মলিন হয়ে পড়ে রয়েছে।

প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত রংপুর বিভাগের শিশুদের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র পুরাতন সদর হাসপাতাল চত্বরের প্রায় ১ দশমিক ৭৮ একর জমির উপর নির্মিত হয়েছে রংপুর শিশু হাসপাতাল। তিন বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া এই হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তত্ত্বাবধান করে। সে সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নবনির্মিত হাসপাতালটি হস্তান্তর করে।

এরপর করোনার ডামাডোলে এখানে শিশুদের চিকিৎসাসেবার কার্যক্রমের উদ্যোগ বন্ধ রেখে এটিকে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে করোনার প্রার্দুভাব অনেক আগে কেটে গেলেও অজ্ঞাত কারণে শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম আজও শুরু করা হয়নি।

দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালিক রংপুর সফরে এসে ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বাঁধে যে এবার শিশু হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম আলোর মুখ দেখবে। তবে সে আশা এখন অফুরন্ত অনিশ্চয়তার প্রহর গুনছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর হাত ধরে হাসপাতালটি উদ্বোধনের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংযোগ কিংবা জনবল নিয়োগ করে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। জনবল নিয়োগ না হওয়ায় রংপুর বিভাগের দীর্ঘ প্রত্যাশার এই চিকিৎসালয় এখন নিজেই যেন ‘অসুস্থ’।

এদিকে রংপুরের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রংপুরের সাবেক সদর হাসপাতালের ১ দশমিক ৭৮ একর জমির মধ্যে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর। ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা মূল্যের সেই কাজটি করেছেন ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মল্লিক এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স অণিক ট্রেডিং করপোরেশন। ভবন নির্মাণের জন্য দুই বছরের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের আড়াই মাস আগেই কাজ শেষ করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তিনতলা মূল হাসপাতাল ভবনের প্রতি তলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ দশমিক ৯৭ বর্গফুট। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে চারতলা ভিত্তির তিনতলা সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার। সিঁড়ি বাদে প্রতি তলার আয়তন দেড় হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ডক্টরস কোয়ার্টারের নিচতলায় গাড়ি পার্কিং, দ্বিতীয় তলা থেকে ডাবল ইউনিট। আছে ছয়তলা বিশিষ্ট স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার। দুইতলা বিশিষ্ট গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার। নিচে দুটি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনের জন্যও নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভবন।

শিশু হাসপাতালের মূল ভবনের ১ম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং ল্যাব। দ্বিতীয় তলায়  অপারেশন থিয়েটার, ব্রোন ইউনিট এবং ৩য় তলায় ওয়ার্ড এবং কেবিন থাকবে। নবনির্মিত এই হাসপাতাল ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা সিভিল সার্জনকে ২০২০ সালের ৮ মার্চ হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ওই বছরে করোনা প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ভবনটিকে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখন সেখানে করোনা রোগীরদের চাপ নেই। এ কারণে কাঙিক্ষত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এই শিশু হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ সেবা শুরুর দাবি জানিয়েছে রংপুরবাসী। হাসতালটি চালু হলে এখানে এই অঞ্চলের শিশুদের বিনা মূল্যে জটিল অপারেশনসহ বিশেষায়িত উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও এখন পর্যন্ত শিশু হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল এবং শিশু স্বাস্থ্যসেবার যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়নি। এর ফলে রংপুর অঞ্চলের শিশুদের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছুটতে হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সীমাবদ্ধ পরিসরে বর্তমানে এই অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় জনবলসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে এখানে শিশুদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবাও মিলছে না।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. শাহ্ মো. রফিকুজ্জামান বলেন, রংপুর বিভাগে পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল খুবই জরুরি। রমেক হাসপাতালে একটি মাত্র শিশু বিভাগ দিয়ে এ অঞ্চলের চিকিৎসা প্রত্যাশী শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নতুন পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করা উচিত। এটি চালু হলে শিশুদের জটিল সার্জারি ও সাধারণ রোগের চিকিৎসা স্বল্পমূল্যে প্রদান করা সম্ভব হবে। শিশুদের চিকিৎসা বাবদ অভিভাবকদের আর্থিক খরচ ও ভোগান্তি কমবে। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার প্রবণতাও অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

dhakapost

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির জানান, শিশু হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবল পাওয়া গেলেই এটি চালু করা হবে। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন মিলতে পারে বা কতদিন পর চালুর সম্ভাবনা রয়েছে, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, রংপুর ১০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং জনবলের চাহিদা নির্ধারণ করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ চলছে। আরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আশা করছি ভালো কিছু হবে।

১০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির কার্যক্রম দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ার বিষয়ে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বিষয়টি জানি। এটি স্থানীয় এমপি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখা উচিত। দুঃখজনক হলেও সেভাবে বিষয়টি নেওয়া হয়নি। আমি বিষয়টি জোরালোভাবে দেখার আহ্বান করছি।

আরও খবর: