জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ২৩ মে ২০২৩ , ৬:১০ পূর্বাহ্ণ
সুনামগঞ্জে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে ধান। ইতোমধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে সোনালী ধান গোলায় তুলছেন কৃষক। কয়েক বছর পর ভয় ও শঙ্কাহীনভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে বোরো ধান উত্তোলন করেছেন সুনামগঞ্জের কয়েক লাখ কৃষক।
রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় ধান শুকানো শেষ করে গৃহপালিত পশুর প্রধান খাদ্য খড় গাদায় তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। পানিবেষ্টিত জেলায় কাঁচা ঘাস কম উৎপাদন হওয়ায় এ জেলার সাড়ে ৭ লাখের বেশি গরু-মহিষের খাদ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় খড়ের উপর। শতভাগ বোরো ধানের পাশাপাশি এ বছর ১৬০ কোটি টাকার ২ লাখ মেট্রিক টন শুকনো খড় উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
প্রাণি সম্পদ দপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, সুনামগঞ্জে মোট ধান উৎপাদনের অর্ধেক কাঁচা খড় উৎপাদন হয়। যা থেকে শুকানোর পর এক চতুর্থাংশ গোখাদ্যযোগ্য শুকনো খড় পাওয়া যায়। জেলায় এবছর কাঁচা খড় শুকানোর পর ২ লাখ মেট্রিক টন শুকনো খড় উৎপাদিত হয়েছে। প্রত্যেক কেজি খড়ের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৮ টাকা দরে ২ লাখ মেট্রিক টন খড়ের মূল্য দাঁড়ায় ১৬০ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের কৃষক ফজর আলী বলেন, মানুষের জন্য যেভাবে ধান প্রয়োজন, গরু-বাছুরের জন্য খড় ততটা প্রয়োজন। ধান শুকানো শেষ। এখন খড় শুকিয়ে বাড়িতে নিচ্ছি।
গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, মানুষের যেকোনোভাবে তার ক্ষুধা মিটিয়ে নিতে পারে। অন্য কাউকে বলতে পারে। কাজ কাম করতে পারে। কিন্তু গরুর ক্ষুধা লাগলে খাবার না পেলেও সে কিছু বলতে পারে না। তার খাবার আমাদের খাবারের আগে জোগাড় করে রাখতে হয়।
ইউনিয়নের বড় কৃষক মুরাদ মিয়া বলেন, বন্যার কারণে গত বছর খড় তুলতে পারি নাই। খুব কষ্ট হয়েছে গরু পালতে। শেষে এক হাজার টাকা মণ দরে খড় কিনে গরুকে কোনোমতে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখছি। এবছর আল্লাহ আমাদের বাম্পার ফলন দিছেন। সঙ্গে খড়ও দিছেন। গ্রামের সবাই ধানের সঙ্গে খড় ঘরে তুলতে পেরেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, সুনামগঞ্জের মোট গরু-মহিষের পরিমাণ ৭ লাখ ৬০ হাজারের উপর। যেহেতু এ জেলা বছরের অর্ধেক সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে তাই এখানে কাঁচা ঘাস কম পাওয়া যায়। যার কারণে এখানে শুকনো খড় প্রধান গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ২ লাখ মেট্রিক টন খড় সুনামগঞ্জের গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের তথ্য সূত্রে, সুনামগঞ্জে এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৯৫ হেক্টর বেশি। সম্ভাব্য ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার মেট্টিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। কাটার বাকি আছে আরও ২শ হেক্টর জমির ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, আমাদের শতভাগ বোরো ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। রৌদ্রজ্বল আবহাওয়া থাকায় কৃষকরা সুন্দরভাবে ধান ঘরে তুলছেন। একই সঙ্গে গবাদিপশুর প্রধান খাবার খড় হাওরেই শুকাতে পারছেন। শুকিয়ে ধানের পাশাপাশি খড়ও সংগ্রহ করছেন।