দেশজুড়ে

শরীয়তপুর হাসপাতালে নার্স-কর্মচারীদের মারধর, প্রতিবাদে চিকিৎসা সেবা বন্ধ

  জাগোকন্ঠ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:০৮ অপরাহ্ণ

মাহাবুব তালুকদার:

শরীয়তপুর ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালের পাঁচ কর্মচারীকে এক রোগীর স্বজনরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে বেলা পৌনে ১১টা থেকে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসক-নার্সরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন শারমিন নামের এক রোগী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রায়হান নামের এক যুবক তার ফাইল আনতে হাসপাতালের দোতলায় নার্সদের কক্ষে যান। সেখানে দায়িত্বে থাকা নার্স নাসিমা আক্তার চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে রোগীর ফাইল নিতে বলেন। তখন রায়হান চার-পাঁচ সহযোগী নিয়ে ওই নার্সের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে তাকে মারতে উদ্ধত হন। হাসপাতালের অন্য কর্মীরা এর প্রতিবাদ করেন।

ঘটনার ১৫ মিনিট পর রায়হান বেশ কিছু লোকজন নিয়ে জরুরি বিভাগের নার্স আবু হানিফ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুলাল ঢালী, বাবুর্চি খালেদ সিকদার, অফিস সহকারী জোবায়ের হোসেন ও ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুমার সরকারকে মারধর করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে যান তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান।

এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বেলা পৌনে ১১টা থেকে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেন। তখন জরুরি বিভাগের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর ১টার দিকে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম আবার শুরু হয়। হামলাকারীদের গ্রেফতার ও হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে জরুরি বিভাগ ছাড়া সব সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসক-নার্সরা।

হাসপাতালের সিনিয়র নার্স নাসিমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রোগীর ফাইল নিতে আসেন এক যুবক। তাকে শুধু বলেছি, এভাবে কোনও রোগীর ফাইল আমরা দিতে পারি না। ওই ফাইল রোগীর চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক নার্সদের কাছে থাকে। কারও বিশেষ প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে নিতে হয়। আমি ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে ফাইল নিতে বলেছিলাম। তখন তিনি আমার ওপর চড়াও হন ও আমাকে অপদস্থ করেন।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘যারা হামলা চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে রায়হান নামের একজনকে চিনতে পেরেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অন্যদের শনাক্ত করা হবে। এই হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সব সেবা বন্ধ থাকবে।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দীহ আহমেদ বলেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার তথ্য পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের ধরতে অভিযান চালানো হবে। চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

হাসপাতালের কর্মচারী দুলাল ঢালী বলেন, ‌কোনও কিছু বুঝে উঠার আগেই রোগীর স্বজন বাইরে থেকে লোকজন এনে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের দুজন কর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনার বিচার চাই।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইকবাল হোসেন বলেন, ‌‘হামলার পর আমরা এখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই আপাতত জরুরি চিকিৎসা সেবা ছাড়া অন্য সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

আরও খবর: