দেশজুড়ে

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে নানা পেশাজীবি মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ

  জাগোকন্ঠ ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ওয়াসিফুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি:

দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ৫ই জুন সর্বশেষ ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি, ঈদুল আযহা এবং পরবর্তীতে ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার দিন থেকেই পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বিষয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মবিরতি এবং সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। মাঝে কয়েকদিন অফিস ও আবাসিক হল খোলা থাকলেও আজ অবধি প্রায় ২ মাস বন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাসের ক্লাস-পরীক্ষা। এই লম্বা বন্ধে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের কপালে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসে প্রায় দেড়শো ভ্যানচালক রয়েছেন যাদের ইনকামের প্রধান উৎস ছিল ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু লম্বা ছুটিতে শিক্ষার্থীরা না থাকায় তাদের আয় কমে গেছে প্রায় তিন চতুর্থাংশ। অন্যদিকে সম্প্রতি দেশব্যাপী কারফিউ থাকায় বাইরের যাত্রী সংখ্যাও কমে গেছে অনেক। তাই ক্যাম্পাসের বাইরে ভ্যান চালিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।

এছাড়াও, ইবি ক্যাম্পাসের আশপাশের প্রায় তিনশো ব্যক্তি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ও বাইরে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। ক্যাম্পাস সচল থাকলে এসব ব্যক্তির জীবিকাও সচল থাকে। কিন্তু বর্তমানে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ হয়ে গেছে এসব পেশাজীবীদের। সচল সময়ে দোকানদার বা ব্যবসায়ীদের অধীনে একাধিক কর্মচারী কাজ করলেও বর্তমানে ব্যবসা ভালো না হওয়ায় অনেককেই ছাটাই করেছেন দোকান মালিকরা। ছাটাইকৃত কর্মচারীদের অনেকেই দিনমজুরের এবং ক্ষেতখামারে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে শামসু মিয়া নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ক্যাম্পাসের ছেলেপেলে থাকলে আমাদের আয়ও ঠিক থাকে। ক্যাম্পাসের ভেতরে জনপ্রতি ৫টাকা ভাড়া মেরেও দিনে ৬০০/৭০০ টাকা কামাই হতো। কিন্তু এক দেড় মাস ধরে কামাই বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝে হলের ছেলেমেয়েরা আসছিলো কিন্তু এখন আবার সবাই চলে গেছে। এরকম চললে ভ্যানচালানো বাদ দিয়ে মাঠে কাজ করে খাওয়া লাগবে। কারণ এখন দিনে দুই আড়াইশোর বেশি থাকে না।

অপর ভ্যানচালক রহমান আলী বলেন, এই ক্যাম্পাসে ভ্যান চালাই প্রায় পঁচিশ বছর। ভ্যান চালায়েই আমার দুই ছেলেকে বড় করছি। কিন্তু এখন জিনিসপত্রের যে দাম, ভ্যান চালায়ে আয় চলা যাচ্ছে না। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে যেটুকু বা আয় হতো এখন তো সেটাও বন্ধ। সারাদিনে ক্যাম্পাসে ১০০ টাকার ভাড়াও পাই না। ক্যাম্পাসের বাইরের রোডেও যাত্রীর তুলনায় ভ্যানের সংখ্যা বেশি তাই সেখানেও সুবিধা হয়না। এরইমধ্যে সংসার চালাতে একবার কিস্তি তুলছি। জানিনা সামনে কি হবে।

ফাহিম ফটোস্ট্যাটের মালিক বলেন, ক্যাম্পাস খোলা থাকলে দিনে ২/৩ হাজার টাকার ফটোকপি, প্রিন্টিং, বাধাইয়ের কাজ হয়। যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালো ভাবেই চলে যেত৷ কিন্তু এতদিন ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমার চরম লোকসান হচ্ছে। দোকানের ইলেকট্রনিক জিনিস ত ব্যবহার না করলেও নষ্ট হয়ে যায়। বন্ধের সময় ক্যাশ যা টাকা ছিল সেসব শেষ। এখন ধারদেনা করে চলতেছি। এরকম আরো চলতে থাকলে ক্যাম্পাসের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই।

আরও খবর: