দেশজুড়ে

আমতলীর মানববন্ধনে হামলার নেপথ্যে জামায়াত নেতা কবির

  জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ২৮ মে ২০২৩ , ৫:৫৪ অপরাহ্ণ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের জাল সনদধারী অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়ার অপসারণ ও বেতন ভাতার দাবীতে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীদের মানববন্ধনে হামলার নেপথ্যে মুল পরিকল্পনাকারী আমতলী পৌর জামায়াতের আমির কবির হোসেন। তার প্রত্যক্ষ মমদেই মানববন্ধনে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী, হামলার ভিডিও ফুটেজ ও আহত শিক্ষকদের থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। মানববন্ধনে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনার সাথে জড়িত ফোরকানসহ জামায়াত নেতার শাস্তি দাবী করেছেন। এদিকে বরিবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানববন্ধনে হামলাকারী বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদীর জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দেন।
জানাগেছে, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯ সালে বিএ (পাস) জাল সনদ দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকুরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হন। অধ্যক্ষ হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারীর অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাঁর ডিগ্রি পাসের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তিনি স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত ৮ বছর ফোরকান কলেজে দায়িত্ব থেকে দুরে ছিলেন। ২০২১ সালের ১২ জুলাই ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসিন হন।

ওই বছর ২৬ নভেম্বর কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে পুনরায় বরখাস্ত করে সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক ফেরসৌসি আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কলেজের কমিটির বরখাস্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ফোরকান গত বছর ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রীট করে চিঠির স্থাগিতাদেশ চান। কিন্তু আদালতের বিচারক কামরুল কাদেরের দ্বৈত বেঞ্চ কলেজর কমিটির বরখাস্তের আদেশ স্থগিত না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে মতামত দেয়ার নির্দেশ দেন। কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছে মর্মে ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আপিল করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের মতামত এবং তার আপিল আবেদনে মেরিট না থাকায় সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৯ মে নামঞ্জুর করে দেন। কিন্ত এরপরও ফোরকান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জবর দখল করে কলেজের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাল সনদধারী বহিস্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়ার অপসারণ ও বেতন ভাতার দাবীতে গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১ টার দিকে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীরা মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধন চলাকালে পরিকল্পিতভাবে আমতলী পৌর জামায়াতের আমিন কবির হোসেন ও বহিস্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকানের যোগসাজসে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় কলেজের জেষ্ঠ্য প্রভাষক সাংবাদিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীনসহ চার শিক্ষক আহত হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখাগেছে, জামায়াত নেতা কবির হোসেন কয়েকজন শিক্ষকদের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। তার হামলার পরপরই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়। মানববন্ধনে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

এরপরই সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনার সাথে জড়িত ফোরকানসহ জামায়াত নেতার শাস্তি দাবী করেছেন। এদিকে বরিবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানববন্ধনে হামলাকারী বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদীর জামিনের আবেদন করে। আদালতের বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান দীর্ঘ শুনানী শেষে তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, মানববন্ধনের হামলা করতে জামায়াত নেতা কবির হোসেন কলেজ সড়কের ব্র্যাক অফিসের সামনে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে রাখে। ওই সন্ত্রাসীরাই মানববন্ধনে হামলা করে শিক্ষকদের মারধর করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, জামায়াত নেতা কবির হোসেন ও জলিল অতর্কিতভাবে শিক্ষকদের উপর হামলা করে। এরপরই ফোরকানের লালিত বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদী, বাবুল, নজরুল ও জলিলসহ বেশ কয়েকজনে হামলায় অংশ নেয়।
আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আহত জেষ্ঠ্য প্রভাষক জয়নুল আবেদীন বলেন, পৌর জামায়াতের আমির কবির হোসেন, জলিল ও নজরুল ইসলাম প্রথম আমার উপরে হামলা করে। এর পরই ফোরকান ও তার লালিত সন্ত্রাসীবাহিনী আমাকে বেধরক মারধর করে।
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি এ্যাড. মহসিন মিয়া বলেন, বিচারক মানববন্ধনে হামলাকারী বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দিয়েছেন।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, মানববন্ধনে হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

আরও খবর: