রবিউল ইসলাম খান,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবাণীগঞ্জ ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর মৌজার ওয়াবদা অফিস নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১ শতাংশ দখলের চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী তহশিলদার শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে রায়পুর পৌর তহশিলদার হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় এলাকার নিরীহ ব্যাক্তিদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ তদন্তের দাবী করেছে এলাকাবাসী। সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ওয়াবদা অফিস সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালে ওই সম্পত্তি থেকে বেসরকারী এনজিও সংস্থা ডরপ কে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ২৬ শতাংশ সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়। এর পর ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর নির্ধারিত ইজারা মূল্যের ভিত্তিতে ডরপ ওই লিজের অর্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড কে পরিশোধ করে আসছে। তবে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন থাকার কারনে কয়েক বছরের লিজ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে ডরপ জানায়। বর্তমানে ডরপ তাদের ওই অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে (ভিজিডি), মাতৃত্বকালিন ভাতাপ্রাপ্ত মায়েদের দারিদ্র বিমোচনে স্বপ্ন প্যাকেজ ও স্থানীয় গরীব পরিবারের ছেলে মেয়েদেরকে সরকারী প্রাথমিক শিক্ষায় অর্ন্তভুক্ত করার জন্য ডরপ এর ব্যবস্থাপনায় মাতৃবন্ধু নোমান একাডেমীর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে উক্ত সম্পত্তিতে নজর পড়ে ওই এলাকার
তহশিলদার শাহাদাত হোসেনের তিনি এ সম্পত্তি নিজের দাবী করে সম্প্রতি মাতৃবন্ধু নোমান একাডেমীর প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার প্রধান ও এলাকার নিরীহ ওয়ার্কশপ দোকানদার শাহাদাত হোসেন, রিক্সা চালক আলমগীর হোসেন, দোকানদার শাখাওয়াত হোসেন, রিক্সা চালক খুরশিদ আলম সহ এলাকার ৬ জনকে আসামী করে যুগ্ন জেলা দায়রা জজ ১ম আদালতে একটি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন। মামলায় শাহাদাত হোসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১ শতাংশ সম্পত্তি নিজের দাবী করে আসামীদের তার ভাড়াটিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ মামলার অভিযোগের সাথে সরেজমিনে গেলে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
তহশিলদার কে এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার কামরুল আলম মিঠু সহযোগীতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মাতৃবন্ধু নোমান একাডেমীর প্রধান শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি ও আমাদের প্রতিষ্ঠান ডরপের সম্পত্তি দখলের জন্য মিথ্যা তথ্য
দিয়ে তহশিলদার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রশাসনের নিকট দাবী জানাই। আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রায় ১২০ জন গরীব ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা লেখা পড়া করে। মূলত তাদের শিক্ষা জীবন নসাৎ করতে এই ষড়ষন্ত্র বলে তিনি দাবী করেন। ওই এলাকার ওয়ার্কশপ মেস্তরী শাহাদাত হোসেন ও স্থানীয় দোকানদার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ থেকে নিজ নিয়ে দোকান ঘর তৈরি করে ব্যবসা করে আসছি। অথচ তহশিলদার আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে আমরা এ প্রতিবাদ জানাই এবং তহশিলদার শাহাদাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাই।
স্থানীয় দিন মজুর খুরশিদ আলম বলেন, সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আমাকে একটি বিনামূল্যে ঘর দিয়েছে। ওই ঘর এখন দখল করে আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে হয়রানি করছে ভূমিদস্যুরা। এ ব্যাপারে বেসরকারী এনজিও ডরপের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার (শিক্ষা) আবদুল মালেক জানান, সরকারী সম্পত্তি ব্যক্তি দখলের ষড়ষন্ত্র খুবই দু:খ জনক। আমরা আইনি ভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্ততি
নিচ্ছি। একজন সরকারী লোক হয়ে সরকারী সম্পত্তি দখলের চেষ্টা আমরা হতবাক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার কামরুল আলম মিঠু মোবাইলে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: জাহাঙ্গীর জানান, সরকারী সম্পত্তি ব্যক্তি হিসেবে দাবী করার সুযোগ নেই। মূলত ওয়াবদা অফিস সংলগ্ন ৫১ শতাংশ সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আমরা চুক্তির মাধ্যমে ২৬ শতাংশ এনজিও সংস্থা ডরপ কে লিজ দিয়েছি। মহামান্য আদালত যদি আমাদের কাজে কোন কাগজপত্র চায় তা হলে আমরা তা জমা দিবো। অভিযোগের ব্যাপানে স্থানীয় তহশিলদার শাহাদাত
হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলন তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। ওই সম্পত্তি আমার পৈত্রিক। জেলা পরিষদ ও
পানি উন্নয়ন বোর্ড যে তাদের সম্পত্তি বলে দাবী করছে তা সঠিক নয়। আমার কাছে দলিল সহ কাগজপত্র রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১ শতাংশ যে সম্পত্তি
রয়েছে তা অন্য জায়গা এই সম্পত্তি আমাদের। আমি আমার সম্পত্তি উদ্ধার করার জন্য আদালতে মামলা করেছি বাধ্য হয়ে। তিনি আরও পাল্টা অভিযোগ করে বলেন আদালতে মামলা দায়ের করার পর আদালত আসামীদের শোকজ করেছে। এ কারণে তারা আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বলে তার
দাবী।
Leave a Reply