প্রচ্ছদ » আইন-আদালত » ভাই হত্যার বিচারে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে মুছা
ভাই হত্যার বিচারে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে মুছা
জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১৭ মার্চ ২০২৩ , ১২:২৭ অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়ায় মসজিদে এক খণ্ড জমি দান করা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে খুন হন আবুল হাশেম। এ হত্যাকাণ্ডের এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত আসামি মো. সেলিম। তিনি দীর্ঘ আট বছর পলাতক ছিলেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র এক দিনের মাথায় তাকে জামিন দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ ফারজানা আকতার।
ওই জামিনের আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন— ‘আদালতে সেলিমের জামিনের আবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের ঘোর বিরোধিতা করেন। মামলার এফআইআর, এজাহার ও জব্দ তালিকা ১৬১ ধারার জবানবন্দিসহ অন্যান্য কাগজাদি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়— এজাহারে আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। আসামিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেনি। সহযোগী আসামিরা জামিনে আছেন। আসামি সেলিম সম্পূর্ণভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার। সার্বিক বিবেচনায় পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে দুজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করা হলো।’
এমন আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৭ মার্চ জেলা জজ আদালতে একটি দরখাস্ত দেন বাদীপক্ষ। যেখানে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ৫২৬ (বি) ধারা মোতাবেক বিচারিক আদালতটি পরিবর্তনের আবেদন করেন। আবেদনটির শুনানি শেষে মামলার নথি তলব করেন আদালত।
এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধান, মামলার নথি ও আদালত পরিবর্তনের জন্য করা আবেদন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ওই হত্যা মামলার আরেক আসামি রাশেদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে সাতকানিয়া থানা পুলিশ। এজাহারভুক্ত এ আসামি মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক ছিলেন। পরে তাকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে আদালতে বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাত বছর পলাতক থাকার পর গ্রেপ্তার হয়ে মাত্র ২৩ দিনের মাথায় ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ ফারজানা আকতারের আদালত থেকে তিনি জামিন পান। জামিনের আবেদন করেন তার ফুফাতো বোন অ্যাডভোকেট রহিমা আক্তার।
সর্বশেষ আসামি সেলিমের জামিনের বিষয়ে আদালতের দেওয়া আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। তারা জানান, বিচারক হিসেবে উনি জামিন দিতেই পারেন। তবে তিনি জামিনের আদেশে উল্লেখ করেছেন— হত্যাকাণ্ডে সেলিমের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো নথিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। বাস্তবে এফআইআর, এজাহার ও জব্দ তালিকায় ১৬১ ধারার জবানবন্দিসহ সব নথিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে
দ্রুত জামিন হওয়ায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন দীর্ঘদিন পলাতক থাকা রাশেদের নিকটাত্মীয় ও হত্যা মামলার অন্য আসামি তৌহিদুর রহমান। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ ফারজানা আকতারের আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। এ নিয়ে আদালত অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর আসামিরা এলাকায় বলাবলি করেন যে তাদের আইনজীবী রহিমা আক্তার ও বিচারক ফারজানা আকতার দুজনে বান্ধবী। সর্বশেষ একই আদালত থেকে গ্রেপ্তারের মাত্র এক দিনের মাথায় জামিন পান হত্যা মামলার আলোচিত আসামি সেলিম।
এর নেপথ্যের কারণ হিসেবে জানা যায়, আইনজীবী রহিমা আক্তার ও বিচারক ফারজানা আকতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সর্বশেষ আসামি সেলিমের জামিনের বিষয়ে আদালতের দেওয়া আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। তারা জানান, বিচারক হিসেবে উনি জামিন দিতেই পারেন। তবে তিনি জামিনের আদেশে উল্লেখ করেছেন— ‘হত্যাকাণ্ডে সেলিমের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো নথিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। বাস্তবে এফআইআর, এজাহার ও জব্দ তালিকায় ১৬১ ধারার জবানবন্দিসহ সব নথিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।’
নথিগুলোতে সেলিমের বিষয়ে বলা হয়— ‘ঘটনার দিন আবুল হাশেম ও আবু মুছা সিকদারকে সেলিমসহ অন্যান্য আসামিরা মিলে মারধর করেন। পরে ভুক্তভোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে মাহালিয়া আমতলী ব্রিজের ওপর গাড়ি আটকে ফেলেন সেলিম ও মামলার অপর আসামিরা। এ সময় মামলা দায়ের করলে মেরে ফেলা হবে বলে আহতদের হুমকি দেন সেলিম ও তার সহযোগীরা। এরকম সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও সেটি আমলে নেননি আদালত।’
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী রহিমা আক্তার বলেন, ‘আমার আত্মীয় রাশেদকে আমি জামিন করিয়েছি। তবে তিনি জেল খেটেছেন। চার্জশিটে তাকে বাদ দিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুপারিশ করেছেন। যদিও কোর্ট তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়েছেন। বিষয়টি আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করব। তাছাড়া বাকি আসামিদের জামিনের বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই।’
আসামি তৌহিদের জামিনের দিন তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে এ আইনজীবী বলেন, ‘ওই দিন মামলার তারিখ ধার্য ছিল। এজন্য আমি আদালতে গিয়েছিলাম।’
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আট বছর পলাতক থাকা এক আসামিকে এক দিনেই জামিন দেওয়া হয়েছে। আবার ওই জামিনের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি নির্দোষ। তার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। বাস্তবে একজন বিচারকের এসব লেখার এখতিয়ার নেই। আবার আসামিপক্ষের এক আইনজীবী ও ওই বিচারক ক্লাসমেট। এজন্য আমরা আবুল হাশেম হত্যা মামলা বিচারের জন্য আদালত পরিবর্তনের আবেদন করেছি।’