জাগোকন্ঠ 18 July 2022 , 9:59 am
বিশ্বজুড়ে পশ্চিমের আধিপত্যের অবসান ঘটছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরাশক্তি হিসেবে উত্থান ঘটছে চীনের। যা এই শতাব্দীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর একটি। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এসব মন্তব্য করেছেন।
রোববার (১৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বন্দ্ব যখন চরমে ঠিক তখনই এই মন্তব্য করলেন ব্রিটেনের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
ব্লেয়ার বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি বা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে বিশ্ব ইতিহাসের একটি বাঁক বদল বা মোড় পরিবর্তন হয়েছিল। এবারের ঘটনাকে (ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন) আগের দু’টি ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা গেলেও এবার পশ্চিমারা স্পষ্টতই ওপরের অবস্থানে নেই।
ব্রিটেনের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘বিশ্বে এতোদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য দেখে আসলেও আমরা এখন সেটির সমাপ্তিতে আসছি।’
রয়টার্স বলছে, ‘ইউক্রেনের পরে, পশ্চিমা নেতৃত্বের জন্য এখন কী শেখার আছে?’ শীর্ষক বক্তৃতায় টনি ব্লেয়ার এসব কথা বলেন। লন্ডনের পশ্চিমে ডিচলে পার্কে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে জোটকে সমর্থনকারী একটি ফোরামে বক্তৃতায় ব্লেয়ার আরও বলেন, ‘(পশ্চিমের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে) বিশ্ব কমপক্ষে দ্বি-মেরু এবং সম্ভবত বহু-মেরুভিত্তিক হতে চলেছে। এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন রাশিয়া নয় চীনের কাছ থেকেই আসবে।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রায় পাঁচ মাসে ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এছাড়া রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া রুশ হামলায় ইউক্রেনে বিপুল সংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুতর সংকটের মুখে পড়েছে। অনেকের আশঙ্কা, রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে এই দ্বন্দ্বে বিশ্ব হয়তো পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার অর্থনীতিকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে কার্যত মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে পশ্চিমারা এবং ক্রেমলিন বলছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চীন ও ভারতের মতো শক্তির ঘনিষ্ঠ হবে রাশিয়া।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের দাবি, ইউক্রেনের যুদ্ধ এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পশ্চিমারা আর চীনের ওপর নির্ভর করতে পারে না। তার ভাষায়, কোনো বিষয় আমরা যেভাবে যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করব চীনও যে সেভাবে আচরণ করবে, সেটি পশ্চিমারা বেইজিংয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে না।
রয়টার্স বলছে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন এবং পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার ‘অপব্যবহারের’ সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে পুতিনও চীনের সাথে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ ঘোষণা দিয়ে সুর মিলিয়েছেন।
১৯৭৯ সালে চীনের অর্থনীতি ছিল ইতালির চেয়েও ছোট। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগের জন্য দেশ উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং বাজার সংস্কার প্রবর্তনের পরে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
এমনকি চীনের অর্থনীতি এক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পুনরুৎপাদনশীল ওষুধ এবং পরিবাহী পলিমারের মতো ২১ শতকের বেশ কিছু প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন।
১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করা টনি ব্লেয়ার বলেন, ‘পরাশক্তি দেশ হিসেবে চীনের অবস্থা প্রাকৃতিক ও ন্যায়সঙ্গত। এটি সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। চীনের মিত্র হতে পারে রাশিয়া ও ইরান।
তিনি বলেন, পশ্চিমের উচিত চীনকে সামরিকভাবে ছাড়িয়ে যেতে না দেওয়া। ব্লেয়ার বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করা উচিত এবং সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা উচিত।’