নিজস্ব প্রতিনিধি:
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান,২০০৮ সালের এই দিনে তার পিতা,মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য, জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য,বীরমুক্তিযোদ্ধা মতিয়র রহমান তালুকদাকে হারিয়েছিলেন।
আজ বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে আবেগআপ্লুত হয়ে উঠেন তিনি। সেই সঙ্গে বাবাকে নিয়ে বেশ কিছু স্মৃতিচারণও করেন জাগোকণ্ঠের সাথে ।
বাবাকে নিয়ে বর্ননা করতে গিয়ে তিনি বলেন”বাবা হচ্ছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ত নির্ভরতার স্থান” বাবা মানে মাথার উপরে আকাশ, আকাশের পরিধি যেমন বিশাল ঠিক তেমনি বাবা। বাবা হচ্ছে একটা বিশাল বটবৃক্ষের মতো। যার ছায়া তলে শত সহস্র মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। যেখানে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি কোন কিছু স্পর্শ করতে পারবে না। বাবা হিমালয় পর্বতমালার চেয়েও বড় কিছু। বাবা হচ্ছে একটা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা, বাবা হচ্ছে নিশ্চিন্ত নির্ভরতা। বাবা হচ্ছে বিশ্বাস আস্থা, বাবা হচ্ছে মাথার উপরে এমন একটি হাত, যে হাতের ওজন দুনিয়ার আর কিছু দিয়ে বহন করা সম্ভব নয়। বাবা-ই, সবকিছু বাবা অস্তিত্ব বাবা-ই ঠিকানা। বাবা অহংকার, বাবা গর্ব। পৃথিবী একদিকে বাবা একদিকে। বাবা হচ্ছে আদর্শ, বাবা হচ্ছে চেতনা। বাবা হচ্ছে দর্শন, বাবা হচ্ছে শিক্ষক, অভিভাবক। বাবা আসলে কি নয়? বাবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করার মত যোগ্যতা আমার নেই।
তিনি আরো বলেন,আমার বাবা অনেক বড় একজন মানুষ ছিলেন। যাকে নিয়ে বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে কথা বলা যায়। যাকে নিয়ে চিৎকার করে কথা বলা যায়। ২,৪,৫ হাজার মাইক লাগিয়ে বক্তব্য করা যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে মাথা তুলে বঙ্গবন্ধুর মতো বজ্রকন্ঠে মতিউর রহমান তালুকদার সম্পর্কে বলা সম্ভব। উনি সোনার মত একজন মানুষ ছিলেন। উনি জানার মত একজন মানুষ ছিলেন। উনি নিজের জীবন দিয়ে নিজেই তার ইতিহাস তৈরি করে গেছেন। উনি কি না? আর এক জীবনে তিনি কি করেন নাই”
শৈশবে বাবার সাথে কাটানো স্মৃতিচারণ করে তিনি।
আপনাদের বংশের সবার নামের শেষে তালুকদার আছে, আপনার নামের শেষে তালুকদার নেই কেন?
খুবই কমন একটা প্রশ্ন সবাই একই কথা বলে, মজার একটা কথা বলি, শুনে বুঝতে পারবেন যে আমার বাবা কেমন ছিলেন? আমার বড়ভাই জামালপুর জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। যিনি বর্তমানে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। স্কুলটা ক্লাশ থ্রী থেকে শুরু। বড় ভাই আব্বাকে জিজ্ঞেস করছিলেন বাবা ওকে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছি। ওর নামের বানান টা কি লিখব সেটা একটু বল। আব্বা বললেন ওর নাম যা আছে তাই লেখ মুরাদ হাসান, তালুকদারটা কেটে দিতে হবে তালুকদার রাখা যাবে না। ভাইয়া অবাক হয়ে আব্বাকে জিজ্ঞাসা করল কেন তালুকদার কেটে দিতে হবে কেন? আমিওতো তালুকদার মাহমুদ হোসেন তালুকদার, আব্বা বললো ওর নাম মুরাদ হাসান তালুকদার তবে তালুকদারটা থাকবে না। কারণ তালুকদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। তালুকদার লেখার কোন প্রয়োজন নেই। আর ও তালুকদার হওয়ার যদি যোগ্যতাই রাখে ও যেন কর্মের মধ্যে তালুকদার হয়,নামে তালুকদার দরকার নেই!
আপনার বাবার সঙ্গে স্মৃতিময় কোন ঘটনা?
প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন- ‘আমি লেখাপড়ার প্রতি পাগল ছিলাম। পড়াশুনা খুব বেশী করতাম। প্রতিবার যখন ফাইনাল পরীক্ষার সময় তখন পরীক্ষার টেনশনে আমার জ্বর আসত, বমি হতো। অনেক নার্ভাস হয়ে যেতাম। পরীক্ষা দিব না এরকম একটা ব্যাপার আমার ভেতর কাজ করতো। তখন আমার বয়স ৬ বছর, তো এবারও পরীক্ষার আগের রাত থেকে আমার ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। অনর্গল বমি করছি। ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে বাবা আমাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেলেন। মা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু কোন লাভ হল না। বাবা আমাকে নিয়ে পরীক্ষার হলে গেলেন, সিটে বসিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, বাবা তোমার কিছু লিখতে হবে না। তুমি শুধু বসে থাকো আর ওদিকে মা শুধু কাঁদছেন আমার এই অবস্থা দেখে। পরীক্ষা কিন্তু আমি ঠিকই দিলাম, চার সাবজেক্টে চারদিনেই আমার একই ঘটনা ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট হলো, যে দ্বিতীয় হয়েছে তার চেয়ে ৫০ নম্বর বেশি মার্ক পেয়েছি। সবগুলো বিষয়ে পেয়েছি ৯৮% মার্ক। বাবা মার্কশীট হাতে নিয়ে আমাকে দুই হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে বলল এটাই আমার ছেলে, ‘এটাই আসল তালুকদার কর্মে তালুকদার’।
আজ আমার বাবা মরহুম মতিউর রহমান তালুকদারের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশবাসির প্রতি দোয়া কামনা করি; আমার বাবাকে যেন আল্লাহ্ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং আমি যেন বাবার আদর্শে আমৃত্যু মানুষের সেবা করতে পারি বলে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি।
মতিউর রহমান তালুকদার এর জন্ম ১৯৩৪ সালের পহেলা নভেম্বর এবং মৃত্যু ১৬ জুলাই ২০০৮।
Leave a Reply