জাগো কণ্ঠ ডেস্ক ১৬ নভেম্বর ২০২২ , ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ
উদ্বোধনের দীর্ঘ সময় পার হলেও বেহাল দশা থেকে বের হতে পারেনি কুমিল্লার বিবির বাজার স্থলবন্দর। রাজধানীর সবচেয়ে কাছের এই স্থলবন্দরটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে মাইলফলক স্পর্শ করতে পারছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বন্দর দিয়ে সামান্য কিছু নির্মাণ সামগ্রী রপ্তানি করা হলেও আমদানি একেবারে নেই বললেই চলে। মৌসুমি কিছু ফল যেমন বেল, তেঁতুল এবং মশলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে শুধু জিরা আমদানি হচ্ছে। যার রাজস্ব খুবই সামান্য। ফলে উন্নতমানের অনেক পণ্য চোরাই পথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করছে বেশ কিছু চক্র।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে মাত্র ২৪টি পণ্য আমদানির বিধান রয়েছে। এই বিধান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ রয়েছে।
এই স্থলবন্দরের অপর প্রান্তে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। অন্য রাজ্যের মতো এটি ধনী না হওয়ায় এখান থেকে আমদানিযোগ্য তেমন পণ্য উৎপাদিত হয় না। ফলে অন্যান্য রাজ্যের উৎপাদিত পণ্য এই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে আগ্রহী নয় ভারতের রপ্তানিকারক। ফলে এই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি খুবই নাজুক। যদিও ত্রিপুরার আশপাশের ৭টি অঙ্গরাজ্যে বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে এই বন্দর দিয়ে।
জানা গেছে, করোনার আগে প্রচুর গম এবং বাঁশ আমদানি করা হলেও করোনার সময়ে বন্ধ হওয়ায় তা এখনও চালু হয়নি। বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ায় বন্ধ রয়েছে গম এবং বাঁশ আমদানি। গুটি কয়েক পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে।
কুমিল্লার রপ্তানিকারকদের দাবি, এই স্থলবন্দর দিয়ে সকল পণ্য রপ্তানির জন্য উন্মুক্ত রাখা হলেও ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় বন্দরে কোয়ারেন্টাইন না থাকায় ইচ্ছে করলেও অনেক পণ্য চাইলেও রপ্তানি করা যাচ্ছে না। যেমন- দেশে মাছ উৎপাদনে কুমিল্লার অবস্থান দ্বিতীয়। এ জনপদে চাহিদার চেয়েও যোগান অনেক বেশি হওয়ায় এখানকার মানুষের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে মাছ সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা এবং আশপাশের রাজ্যগুলোতে মাছের চাহিদা অনুযায়ী যোগান অনেক কম হওয়ায়, সেখানে বিশাল একটি মাছের বাজার ফাঁকা রয়েছে। বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে মাছ এবং পোল্ট্রি ফিড রপ্তানি করলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু পণ্য খালাশের প্রক্রিয়ার জন্য প্রাণীজ কোয়ারান্টাইন নেই বন্দরের বাংলাদেশ এবং ভারতের অংশে। ফলে মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিবির বাজার স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফের সভাপতি জামাল আহম্মদ বলেন, সম্ভাবনাময় এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মাত্র ২৪টি পণ্য আমাদনি করার অনুমতি থাকলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে সকল পণ্য। কিন্তু জটিলতার কারণে শুধুমাত্র গৃহনির্মাণ সামগ্রী ছাড়া তেমন কোনো পণ্য রপ্তানি করা হয় না। আগে গম আমদানি করা হলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন মৌসুমি ফল, আদা, জিরা, আগরবাতি আমদানি করা হয় বাংলাদেশে।
তিনি আরও বলেন, এই বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে ৬-৮ হাজার টন পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি করা হতো। কোভিড শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায়। বছর দুয়েক পর পুনরায় আমদানি-রপ্তানি চালু হলেও তাতে ভাটা পড়েছে। মৌসুমি ফল বেল এবং তেঁতুল আমদানি বেশি হচ্ছে বন্দর দিয়ে। রপ্তানির মধ্যে সিমেন্ট বেশি হচ্ছে। এছাড়া রড, ঢেউটিন, ধান মাড়াইয়ের মেশিন, এলপি গ্যাস ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিবির বাজার স্থলবন্দর সূত্র মতে, সিমেন্ট, কয়লা, ঢেউটিন, সিমেন্ট শিট, গুঁড়া পাথর, পিভিসি কম্পাউন্ড, প্লাস্টিকের দরজা, ইট ভাঙার মেশিন, ধান মাড়াই কল ও কোমল পানীয়সহ কেবল ১৫-২০টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে এই বন্দর দিয়ে। দেশের বড় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে বন্দরটি চাঙা হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে ভারত সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
বিবির বাজার স্থলবন্দর ইনচার্জ ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, করোনার সময়ে বাণিজ্যের হারানো যৌবন আর ফিরে আসেনি। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির ফলে বিবির বাজার স্থলবন্দরেরও পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি অনেক কম।